র্যাবে থাকা পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৫১ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তাদেরকে পুলিশে ফেরত পাঠিয়ে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) পুলিশ সদর দফতরের এক আদেশে তাদের বদলি করা হয়। এদিকে র্যাবে কর্মরত ৫১ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। পুলিশের সাবেক একজন কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে বর্ননা করেছেন।
তারা বলেছেন, র্যাব পুলিশ এবং সেনা বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তাদের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন বা দ্বন্দ্ব বেড়েছে কীনা- একসাথে অনেক কর্মকর্তাকে এভাবে বদলির কারণে সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, র্যাবে কোন টানাপোড়েন বা সমস্যা নাই।
বদলির আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। আদেশে তিনি বলেন, বদলি হওয়া অফিসারদের ৩ জুনের মধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ৪ জুন পুলিশে যোগদান করার নির্দেশ দেয়া হলো।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, র্যাবে প্রাধিকারের বেশি এসপি পদবি কর্মকর্তাদের পদায়নে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটার সমাধান হওয়ার আগেই থেকে ৫০ এএসপি ও সহকারী এসপিকে পুলিশে আকস্মিক বদলি করা হয়েছে।
র্যাব- পুলিশ দ্বন্ধ
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেছুর রহমান বলেছেন, একটি সংস্থা থেকে আরেকটি সংস্থায় একসাথে এত কর্মকর্তাকে ফেরত নেয়ার নজির না থাকায় নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
খবরটি মিডিয়াতে শোনার পরে আমার নিজের কাছেই মনে হয়েছিল যে, এটা একটি অদ্ভূত ঘটনা হয়েছে। এবং এ ধরনের বড় একটি বদলি, আবার ফেরত নিয়ে আসা-এ রকম অতীতে দেখা যায়নি। এটা শোনার পরই মনে হচ্ছিল, ভেতরে কিছু একটা হয়তো আছে বলেন মোখলেছুর রহমান।
একইসাথে তিনি বলেছেন, তবে বাইরে থেকে যেটা মনে হচ্ছে, একটি ইনফরমেশন গ্যাপ বা তথ্যগত কোন ফাঁকফোকর এখানে ছিল। যেকারণে পুলিশ থেকে র্যাবে কিছু লোককে পোস্টিং দেয়ার পরে তাদের অনেকেই হয়তো সেখানে পদের হিসাবের বেশি বা অতিরিক্ত হয়েছেন।
র্যাব গঠন করা হয়েছিল সেনা, বিমান, নৌবাহিনী এবং পুলিশসহ সাতটি বাহিনী থেকে কর্মকর্তা বা লোকবল নিয়ে। বাহিনীটির নীতিমালাতেই বলা আছে যে, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ থেকে সমান সমান ৪৪ শতাংশ করে কর্মকর্তা র্যাবে থাকবে। বাকি ১২ শতাংশ কর্মকর্তা নেয়া অন্যান্য বাহিনী থেকে।
তবে বিভিন্ন সময় র্যাবে কর্মকর্তা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা টানাপোড়েনের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত লিখিত নানা অভিযোগের সমাধান করেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, একসাথে এতজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, এটাকে অভূতপূর্ব বলা যায়।
এটার দু’টো কারণ হতে পারে, প্রথমত যদি পুরোটা রিঅর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করতে যায়, তখনও ঠিক এভাবে হয় না, ফেজআউট (পর্যায়ক্রমে) হয়। আর ভেতরে যদি কোন অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকে, সেটা যদি প্রতিষ্ঠানকে এফেক্ট (প্রভাবিত) করে, সেটা হতে পারে। কারণ সেখানে বিভিন্ন বাহিনী থেকে লোক যাচ্ছে, বলেন ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেছেন, আন্ত:সংস্থার মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন এখানে তো আছেই। শুরু থেকেই এটা আছে, এটা অস্বীকার করলে করা যায়। কিন্তু সত্যটা যদি স্বীকার করে নেই যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন এখানে আছে।
এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে কোন একটা ডিপার্টমেন্টে যদি বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মানুষকে একসাথে করা হয়- তাদের টেমপারমেন্ট, তাদের ট্রেনিং বা দৃষ্টিভঙ্গি এক ট্র্যাকে নেয়া সময়সাপেক্ষ, দীর্ঘ মেয়াদী বিষয় তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা র্যাবে থাকলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের কোন টানাপোড়েন বা সমস্যা নেই। তিনি একযোগে বদলির ঘটনাকে রুটিন বদলি হিসাবে দাবি করেছেন।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, আমরা সাতটি বাহিনীর সংমিশ্রণে র্যাব। আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। যারা এসপি আমাদের এখানে বদলি এসেছেন, তারা যাচ্ছেন না। তাদের এখনও পদায়ন হয়নি।
যারা যাচ্ছেন, তারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সহকারি পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার। তাদের এখানে দু’বছর চাকরি হয়েছে। তারা তাদের নিজ বাহিনী পুলিশে ফেরত যাচ্ছেন, জানান কমান্ডার মঈন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ