রাতে বাড়ির উঠানে বা সামনেই বিশাল খোলা মাঠে বসে গল্প করছেন। হঠাৎ দেখলেন দূর আকাশ থেকে চোখধাঁধানো আলো ছড়িয়ে নেমে আসছে উড়ন্ত কোনো যান বা ইউএফও (অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু)। খুব কাছে এসে আবার হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সেটি। এ ঘটনা দেখে তো চোখ ছানাবড়া। এটি কোনো কল্পকাহিনি নয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনা দিনে দিনে মানুষের মনে ভিনগ্রহবাসী নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো করেছে।
ভিন্গ্রহের প্রাণী আছে না নেই, এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। ভিন্গ্রহীদের নিয়ে নানা ছবিও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আদতে এর অস্তিত্ব আছে কি না তা নিয়ে বিস্তর সংশয় রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই খবর শোনা যায়, আকাশে ভেসে বেড়াতে দেখা গিয়েছে অদ্ভুত যান। যেগুলিকে ভিন্গ্রহীদের যান বা ইউএফও বলে দাবি করা হয়েছে।
এ তো না হয় গেল ভিন্গ্রহের প্রাণী এবং ইউএফও নিয়ে নানা দাবির কথা। এ বার এক গ্রাহক গুগল আর্থ ঘাঁটতে ঘাঁটতে সন্ধান পেলেন অ্যান্টার্কটিকায় বিশালাকায় চাকতির মতো এক বস্তুর। স্কট সি ওয়ারিং নামের স্বঘোষিত ইউএফও বিশেষজ্ঞের দাবি বরফের বুকে ভাসমান ওই গোল চাকতিটি নাকি ভিন্গ্রহের প্রাণীদের। সেটি বরফের উপর আছড়ে পড়েছে। খবর আনন্দবাজার
এর পর ওয়ারিং দাবি করেছেন, এর থেকেই প্রমাণিত যে ভিন্গ্রহের প্রাণী আছে এবং তারা পৃথিবীতে আসে। ওয়ারিং বলেন, ‘আমার এই ভিডিয়োটি শেয়ার করার পর আশা করছি অনেক দেশই ইউএফওটি উদ্ধারের জন্য যাবে। অ্যান্টার্কটিকাকে কি ভিন্গ্রহীরা নিজেদের যান লুকনোর জায়গা হিসেবে বেছে নিল? এই ছবিই প্রমাণ করছে যে ভিন্গ্রহের প্রাণী আছে এবং তারা পৃথিবীতে যাতায়াত করে’। যদিও ওয়ারিংয়ের এ সব দাবিকে নস্যাৎ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ভিনগ্রহবাসী নিয়ে প্রশ্ন, কৌতূহল সম্ভবত সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির আকাশে গত ১৭ বছরে ১৪৪টি ইউএফও দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি কোনোটিরই কোনো ব্যাখ্যা হাজির করতে পারেননি দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী, গবেষকসহ বিশেষজ্ঞরা। কাজেই ইউএফও, ভিনগ্রহবাসী নিয়ে ধাঁধা রয়েই গেছে।
এক গ্রাহক গুগল আর্থ ঘাঁটতে ঘাঁটতে সন্ধান পেলেন অ্যান্টার্কটিকায় বিশালাকায় চাকতির মতো এক বস্তুর। স্কট সি ওয়ারিং নামের স্বঘোষিত ইউএফও বিশেষজ্ঞের দাবি বরফের বুকে ভাসমান ওই গোল চাকতিটি নাকি ভিন্গ্রহের প্রাণীদের। সেটি বরফের উপর আছড়ে পড়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বলছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিমানচালকেরা আকাশে বিভিন্ন সময় যে কয়েক ডজন ইউএফওর দেখা পেয়েছেন, সেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত দাঁড় করানো যায়নি।
এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইউএফও নিয়ে ১৪৪টি ঘটনা তারা জানতে পেরেছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি ঘটনাগুলোর কোনো ব্যাখ্যা তারা পাননি। প্রতিবেদনে উড়োযানগুলো ভিনগ্রহ থেকে এসেছে—এমন সম্ভাবনাও বাতিল করে দেওয়া হয়নি।
মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, আকাশে বিভিন্ন সময়ে হঠাৎই অচেনা বস্তু বা উড়োযান ওড়াউড়ি করতে দেখা যায়। এ নিয়ে প্রতিবেদন দাবি করেছিল কংগ্রেস। পরে ইউএফও দেখার খবর খতিয়ে দেখতে গত বছরের আগস্ট মাসে ‘আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা টাস্কফোর্স’ গঠন করে পেন্টাগন। তারা বলেছে, টাস্কফোর্সকে ওই সব ঘটনা চিহ্নিত, বিশ্লেষণ ও শ্রেণিবিন্যস্ত করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে ইউএফও আসলে কী, এর প্রকৃতি ও সেগুলো কোথা থেকে এসেছে ইত্যাদি বিষয়ে রহস্য উদ্ঘাটন করাও ছিল অন্যতম কাজ।
অন্তর্বর্তীকালীন ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা (ইউএপি)’–এর ১৪৪টি ঘটনার অধিকাংশ ঘটেছে গত দুই বছরে। এর আগে মার্কিন নৌবাহিনী একটি ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজড রিপোর্টিং’ ব্যবস্থা চালু করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪৩টি ঘটনায় রহস্য উদ্ঘাটন করার মতো পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি ছিল। তবে একটি ঘটনার ব্যাপারে বলা যায়, খুব সম্ভবত সেটি ছিল একটি বড় বেলুন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আকাশে এসব রহস্যজনক বস্তুর বিচরণের ঘটনাবলীকে ‘অচেনা উড়ন্ত বস্তু’ বা ইউএফও না বলে ইউএপি বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ ইউএফওকে দীর্ঘদিন ধরেই ভিনগ্রহের নভোযানের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দাবির প্রেক্ষাপটেই ইউএপি সংক্রান্ত এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে, যা গত ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সই করা বিস্তৃত গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কিত আইনের অংশ। সিনেটর মার্কো রুবিও এই প্রতিবেদন প্রকাশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের জন্য একটি ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, কারণ ১৯৪০ এর দশক থেকে সেদেশের সামরিক বাহিনী অচেনা উড়ন্ত বস্তু এবং ‘ফ্লাইং সসার’ সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ ও দাবিগুলো নাকচ করে আসছিল।
তবে এই বিষয়ে এটাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন না। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী অতীতে ইউএফও বিষয়ে তদন্ত করতে প্রজেক্ট ব্লু বুক নামের একটি কর্মসূচি পরিচালনা করে, যা শেষ হয় ১৯৬৯ সালে। ওই তদন্তে ১২ হাজার ৬১৮টি ঘটনা তালিকাভুক্ত করা হয়, যেখানে ৭০১টি বস্তু দেখা গেছে, যা সরকারি ভাষ্যে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবেই থেকে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৮
আপনার মতামত জানানঃ