বিশ্ব ঘুষ সূচকে চলতি বছর ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে আরও এক ধাপ পিছিয়ে ১৬৭ নম্বরে চলে এসেছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় গত বছর (২০২০) বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৬। সে হিসেবে বাংলাদেশে ঘুষ লেনদেন বেড়েছে।
বিশ্বের ১৯৪টি দেশে ঘুষ লেনদেন পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবছর জরিপ চালায় ট্রেস। যেসব দেশে ঘুষের ঝুঁকি বেশি, তালিকায় সেসব দেশের পয়েন্টও বেশি। এই তালিকায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৬। চলতি বছর ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ এক ধাপ পিছিয়ে ১৬৭ নম্বরে চলে এসেছে।
প্রত্যেক দেশের ঘুষের ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়েছে চারটি ক্ষেত্র বিবেচনায়। এগুলো হচ্ছে, সরকারের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক, ঘুষ প্রতিরোধ ও আইনপ্রয়োগ, সরকার ও সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা এবং সুশীল সমাজের নজরদারির ক্ষমতা।
পয়েন্ট বিন্যাস অনুযায়ী, সরকারের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক সূচকে বাংলাদেশে পেয়েছে ৭১ পয়েন্ট, ঘুষ প্রতিরোধ ও আইনপ্রয়োগে ৬৫ পয়েন্ট, সরকার ও সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতায় ৫৯ পয়েন্ট এবং সুশীল সমাজের নজরদারির সক্ষমতার ক্ষেত্রে ৬১ পয়েন্ট।
জরিপ অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ঘুষ লেনদেন হয় উত্তর কোরিয়ায়। এরপরে রয়েছে তুর্কেমেনিস্তান, ইরিত্রিয়া, ভেনেজুয়েলা ও সোমালিয়া। আর সবচেয়ে কম ঘুষ লেনদেন হয় ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ডে।
চলতি বছরের ঝুঁকি তালিকায় প্রতিবেশী ভারত পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে। গত বছর এই তালিকায় ভারত ছিল ৭৭ নম্বরে। এবার দেশটি তালিকার ৮২ নম্বরে চলে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার তথা দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, দু’একজন ধরাও পড়ছে; কিন্তু তা মোটেই সন্তোষজনক নয়। আসলে আমাদের গোড়াতেই গলদ। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া অঘোষিতভাবে বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে।
সরকারি এমন খাত খুঁজে পাওয়া দুস্কর, যেখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয়। ঘুষ না দিলে ফাইল নড়েনা, ঘুষ না দিলে ’বস’ নড়ে না। জনগণও ঘুষ দেওয়ায় অভ্যস্থ হয়ে গেছে। এটি মূলত নিরুপায় হয়েই। যখন দেখা যায় ঘুষ ছাড়া কাজ হচ্ছে না, আবার কাজটি দ্রুত শেষ করতে হবে, তখন বাধ্য হয়েই অবৈধ পথে পা বাড়াতে হয়।
তারা বলেন, ঘুষ লেনদেন বন্ধ করতে হলে দু’এক জায়গায় অভিযান চালিয়ে কাজ হবে না। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘুষ লেনদেনকারী অসাধু ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ঘুষ দেওয়া নেওয়ার কারণে শুধু দেশের মানুষেরই ক্ষতি নয়, বহির্বিশ্বেও আমাদের বদনাম হচ্ছে।
তাই এই অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই সরকার এ ব্যাপারে শুধু হুমকি-ধামকি আর ‘অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে’ না বলে এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রাখবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ