প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা। করোনার দাপটে যখন পুরোপুরি বিধ্বস্ত আমেরিকা, তখন নতুন বিপদে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এই রাষ্ট্র। দেশটিতে এবার ছড়িয়ে পড়েছে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার বিষক্রিয়া। এরই মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়ার বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির ৩৭টি রাজ্যে। অসুস্থ হয়েছে ছয় শতাধিক মানুষ। শুধু আমেরিকা নয়, একই সঙ্গে কানাডা থেকেও এ ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে লেবেল ছাড়া লাল, সাদা ও ইয়েলো পেঁয়াজ ফেলে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ৩৭টি অঙ্গরাজ্যে সালমোনেলা সংক্রমণে ছয় শতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার পর এই সুপারিশের কথা ঘোষণা করা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানায়, এই সংক্রমণের একটি উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া থেকে আমদানিকৃত এবং আইডাহোভিত্তিক একটি কোম্পানির সরবরাহ করা পেঁয়াজ।
এখন পর্যন্ত ৬৫২ জন অসুস্থ হয়েছেন এবং এদের মধ্যে ১২৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
সিডিসি বলছে, প্রকৃত অসুস্থ মানুষের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ বেশিরভাগ আক্রান্তের কথা জানা যাচ্ছে না। ৩১ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৫২ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এক বিবৃতিতে সিডিসি জানায়, অসুস্থ মানুষদের বক্তব্য অনুসারে, অসুস্থ হওয়ার আগে ৭৫ শতাংশ মানুষের পেঁয়াজ খেয়েছেন অথবা কাঁচা পেঁয়াজ খেয়েছেন কিংবা তাদের খাবারে পেঁয়াজ ছিল। অনেক অসুস্থ মানুষ একই রেস্তোরাঁয় খাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
চিহুয়াহুয়া থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ না কেনার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি। আর যাদের কাছে স্টিকার বা প্যাকেজিংয়ের তথ্য ছাড়া পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো ফেলে দিতে এবং যেখানে এগুলো রাখা হয়েছিল সেগুলো সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সালমোনেলা সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণত ডায়রিয়া, জ্বর, পেটে ব্যথার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। এই লক্ষণগুলি সংক্রামিত হওয়ার পর ৬ ঘন্টা থেকে ৬ দিন পর্যন্তও থাকতে পারে। তবে গড় হিসেবে দেখা গেছে, সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিন এই রোগ থাকে। মূলত ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী লোকেরাই এতে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে সালমোনেলা সংক্রমণ অন্ত্রের পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে, যে কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন।
সালমোনেলা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা মানুষের শরীরে ডায়রিয়ার মতো অসুখ নিয়ে আসে। যদিও এই সংক্রমণের কারণে আরও অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। এর মধ্যেই রয়েছে টাইফয়েড ফিভার, গ্যাস্ট্রোএন্টারটাইটিস, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গ। খাবার ও দূষিত জল থেকে এই রোগ ছড়ায়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রস্রাব, হাড়, রক্ত এবং জয়েন্টগুলি সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
সাধারণত দূষিত খাবার অথবা জল খেলেই সালমোনেলা সংক্রমণ হতে পারে। নিজেকে এই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কাউকে অবশ্যই রান্না করা মাংস, সামুদ্রিক খাবার, ডিম বা হাঁস-মুরগি খাওয়া এড়ানো উচিত। এছাড়াও অবশ্যই ফলমূল এবং শাকসবজি সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। যে সব মানুষ রান্নাঘর সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখেন না, অথবা সঠিকভাবে হাত পরিষ্কার রাখেন না তাদেরও এই সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই পরিষ্কার থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সালমোনেলা সংক্রমণ থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। সেই দেশে খামার থেকে এই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে অনুমান।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মানুষ ও পশুপাখি সালমোনেলায় আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্তের লক্ষণ হলো— ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশের ছয় থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর ও পেটব্যাথা শুরু হয়। পাঁচ বছরের নিচের শিশু ও ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তাদের অসুস্থতা গুরুতর হতে পারে।
তারা বলেন, সালমোনেলা হলো টাইফয়েডের জীবাণু। এই জীবাণু মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে সাধারণত জ্বর, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হওয়ার ছয় ঘণ্টা থেকে ছয় দিন পর্যন্ত এই উপসর্গগুলো ক্রমশ প্রকট হতে থাকে। সাধারণত চার থেকে সাত দিন পর্যন্ত এই সংক্রমণের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ কারণে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪০
আপনার মতামত জানানঃ