১১ হাজারের বেশি বন্দিকে খুনের অভিযোগে নাৎসি ক্যাম্পের প্রাক্তন সচিবের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হল জার্মানিতে। ৯৬ বছর বয়সী অভিযুক্ত এই সচিবের নাম আর্মগার্ড ফুর্সনার।
আনন্দবাজারের সূত্র মতে, বিচারের ভয়ে ফুর্সনার পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। নিজের শহর কুইকবর্ন থেকে হামবুর্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
সূত্র মতে, নাৎসি অধিকৃত পোল্যান্ডের স্টাথফ ক্যাম্পের সচিব ছিলেন ফুর্সনার। তার বয়স তখন ১৮। ওই ক্যাম্পের কমান্ড্যান্ট পল ওয়ার্নার হোপের কার্যালয়ে টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করতেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৪৩-৪৫ সালের মধ্যে স্টাথফ ক্যাম্পে হোপের নির্দেশে বন্দিদের কী ভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য ফুর্সনার জানেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, সেই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে ফুর্সনারের বিরুদ্ধে।
সূত্র মতে, প্রায় এক লক্ষ মানুষকে স্টাথফ ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ওই ক্যাম্পে ছিল গ্যাস চেম্বার। সেখানে গুলি করে, বিষ ইঞ্জেকশন দিয়ে এবং গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে বহু ইহুদিকে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইহুদি গণহত্যার সময় লক্ষ লক্ষ ইহুদিগণকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে জার্মান নাৎসি বাহিনী কতিপয় নির্মূল শিবির নির্মাণ করে। এসব নির্মূল শিবিরে ইহুদি ছাড়াও অন্যেরা পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়, যেমন- পোলীয়, সোভিয়েত যুদ্ধবন্দি এবং রোমানিগণ।
এসকল শিবিরের বন্দিদের হত্যার জন্য ব্যবহৃত হত বিষাক্ত গ্যাস, গ্যাস প্রয়োগের জন্যে শিবিরের স্থায়ী ব্যবস্থা থাকত নতুবা গ্যাস প্রয়োগ করা যায় এরূপ গাড়ির ব্যবস্থা থাকত।
বন্দিদেরকে রেলগাড়িতে করে হত্যার উদ্দেশ্যে এই স্থায়ী স্থাপনাসমূহে নিয়ে যাওয়া হত। এই প্রক্রিয়ার প্রথম সূচনা হয় যখন নাৎসিরা অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে হাসপাতালের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের নির্মূল করার উদ্যোগ নেয়, তাদের এই গোপন মানবহত্যা কর্মসূচির নাম ছিল “অ্যাকশন টি-৪”।
মানুষ হত্যার এই প্রযুক্তিকে পরবর্তীতে আরো সমুন্নত ও সম্প্রসারিত করে যুদ্ধকালীন অপ্রস্তুত বন্দিদের ওপর প্রয়োগ করা হয়, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ইহুদি, যারা ছিল এসকল হত্যা শিবিরে নিহত বন্দিদের শতকরা ৯০ ভাগ।
“৩য় রাইখ”-এর মতে ইহুদিদের গণহত্যা ছিল ইহুদি প্রশ্নের “চূড়ান্ত সমাধান”। এ ঘটনাসমূহ একত্রে ইহুদি গণহত্যা বা হলোকাস্ট নামে পরিচিত, যার কারণে ইহুদি ব্যতীত অন্যান্য আরো ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়।
এ সমস্ত নির্মূল শিবিরে হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আড়াল করার জন্যে নাৎসি বাহিনী ব্যপক প্রচেষ্টা চালায়। গণহত্যায় ব্যবহৃত প্রক্রিয়া এবং নিহতদের দেহাবশেষ সমেত সমস্ত প্রমাণ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
গোপনীয় “সোন্ডারঅ্যাকশন ১০০৫” কর্মসূচির ফলে বন্দি শ্রমিকদের দ্বারা শিবিরগুলো ভেঙে ফেলার প্রয়াস চালানো হয়, সমস্ত নথিপত্র ধ্বংস করা হয়, গণকবরগুলো খনন করে দেহাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়। কিছু কিছু নির্মূল শিবিরের প্রমাণাদি সরিয়ে ফেলার আগেই সেখানে সোভিয়েত বাহিনীর সৈন্যেরা সেগুলো উদ্ধার করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ