বৃষ্টি হলে পানি পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বৃষ্টিতে পানি না পড়ে লোহার টুকরা পড়লে কেমন হবে? শুনে কল্পবিজ্ঞান মনে হচ্ছে? আসলে এটাই বাস্তব। আমাদের সৌরজগতের বাইরে অনন্ত মহাকাশের কোনও এক প্রান্তে এক গ্রহ চোখে পড়েছে বিজ্ঞানীদের। তাকে ভালোভাবে চিনতে গিয়েই চমকে উঠলেন তারা। দেখলেন, অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন গ্রহে লোহার বৃষ্টি হয়। একনাগাড়ে লোহার বৃষ্টিতে পুড়ে যাচ্ছে গ্রহের একপাশ। যতটা আঁচ করা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি তাপমাত্রায় পুড়ে যাচ্ছে ‘WASP-76b’ নামের ভিনগ্রহটি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
পৃথিবী থেকে এই গ্রহের দূরত্ব ৬৪০ আলোকবর্ষ। গ্রহটির একদিকে আবার সবসময় দিন, অন্যদিকে সবসময় রাত। মানে ঠিক চাঁদে যেমন হয়। আর এই দুইদিকের মাঝখানে সন্ধেবেলা। সেখানে ঝড়বৃষ্টি লেগেই আছে। প্রবলবেগে হাওয়া বয়। আর বৃষ্টি মানে তো যে সে বৃষ্টি নয়। এখানে আকাশ থেকে জল নয়, লোহা ঝড়ে পড়ে।
সেখানে তাপমাত্রা ২ হাজার ২৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৪ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়েও অনেক বেশি। যা আমাদের সূর্যের পিঠের (‘সারফেস’ বা ‘ফোটোস্ফিয়ার’) তাপমাত্রা (৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস)-র এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। গ্রহটি আয়তনে প্রায় বৃহস্পতির সমান। আর এই ভিনগ্রহটির ঝলসে যাওয়ার ছবি উঠে এসেছে একটি গবেষণাপত্রে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, আমাদের থেকে মাত্র ৬৪০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই ভিনগ্রহটি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে, তার তাপমাত্রা সূর্যের চেয়েও অনেক বেশি। সেই ভিনগ্রহটি ১.৮ দিনেই সেই নক্ষত্রটি প্রদক্ষিণ করে। যেখানে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর লাগে ৩৬৫ দিন ও কয়েক ঘণ্টা। শুধু তা-ই নয়; চাঁদের যেমন একটি দিক সব সময় থাকে পৃথিবীর দিকে (জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘টাইডালি লক্ড’) এই ভিনগ্রহটিরও তেমনই একটি দিক সব সময় থাকে তার নক্ষত্রের দিকে। সে দিকে সব সময়ই দিনের আলো। কখনও অন্ধকার হয় না সেই দিকে। আর ভিনগ্রহের অপর দিকে কখনই নক্ষত্রের মুখ দেখতে পায় না সেই দিকটি ঢাকা থাকে অন্ধকারে। এই দিকের তাপমাত্রা অন্য দিকটার চেয়ে কিছুটা কম।
নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রে জয়বর্ধনে জানিয়েছেন, প্রচণ্ড তাপমাত্রায় ভিনগ্রহটির সবটুকু লোহাই গলে যাচ্ছে। আর সেই গলানো লোহা বাষ্পীভূত হয়ে উঠে আসছে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে। সেখান থেকেই ওই অত্যন্ত উষ্ণ গলিত লোহার বাষ্প ভিনগ্রহের অন্ধকারে ঢেকে থাকা দিকের কিছুটা ঠান্ডায় তরল লোহায় পরিণত হচ্ছে। অনর্গল ঝরে পড়ছে খুব গরম লোহার বৃষ্টি হয়ে।
জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড আরেনরাইখ জানিয়েছেন, ‘এই গ্রহে বিকেলের দিকে বৃষ্টি হয়। তবে সেটি লোহা বৃষ্টি। এই গ্রহটি যে নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত হয় সেই নক্ষত্রের দিকে গ্রহটি একটি দিক সব সময় থাকে এবং অপর দিকে সব সময় অন্ধকার। গ্রহটি ওই নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৪৩ ঘণ্টা। সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে পরিমাণ তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ আসে, তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি বিকিরণ আসে ওই নক্ষত্র থেকে WASP-76B এ।
এই গ্রহে দিন ও রাতের তাপমাত্রা মধ্যে বিশাল ফারাক থাকে। এই গ্রহে অন্ধকার অর্থাৎ রাতের দিকে শীতল অংশের তাপমাত্রা থাকে ১,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাতের তাপমাত্রার এত পরিমান ফারাকের ফলেই এখানে বাতাসে দাপটের পরিমাণ অনেক বেশি হয়।
এই গ্রহ সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় মহাকাশ গবেষকরা জানিয়েছেন, এই গ্রহের তাপমাত্রা প্রচন্ড বেশি। ওই গ্রহে দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকে ২,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। এই তাপমাত্রায় কোন প্রাণ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে না। তাই সেই গ্রহের কোন প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এত পরিমান তাপমাত্রায় লোহাসহ যাবতীয় ধাতু গলে গিয়ে বাষ্পে পরিণত হয়। এই গ্রহে বাতাসের দাপট অনেকটাই বেশি ফলে বাষ্পে পরিণত হওয়া ধাতু উড়ে যায় এবং রাতের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২০
আপনার মতামত জানানঃ