আজ ১৫ সেপ্টেম্বর, ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রচলিত একটি বিশেষ দিন পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এর পর থেকেই প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে। এদিকে আজ বুধবার গণতন্ত্র দিবসে হংকংয়ে ৯ গণতন্ত্রপন্থি কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি আরও ৩ কর্মীকে স্থগিত সাজা দেওয়া হয়েছে।
এ ১২ জনের মধ্যে তিয়ানআনমেন স্মরণে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজক আলবার্ট হো, সাবেক আইনপ্রণেতা এডি চু এবং গণতন্ত্রপন্থি বড় বড় সমাবেশের আয়োজক সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্টের সাবেক নেতা ফিগো চ্যানও আছেন।
গত সপ্তাহে হংকংয়ের পুলিশ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজক প্যাট্রিয়টিক ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টস ইন চায়নার সমর্থক হংকং অ্যালায়েন্সের সদস্যদের জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করেছে।
বেইজিং গতবছর হংকংয়ের ওপর বিতর্কিত এই আইনটি চাপিয়ে দিয়েছিল।
পুলিশ হংকং অ্যালায়েন্সকে ‘বিদেশি বাহিনীর এজেন্ট’ বললেও অ্যালায়েন্স তা অস্বীকার করে আসছে।
অ্যালায়েন্সের নেতা আলবার্ট হো, লি চিউক-ইয়ান ও চোও হ্যাং তুংয়ের বিরুদ্ধে শাসনকাঠামো পরিবর্তনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৯ সালের বিক্ষোভে ভূমিকা রাখায় হো ও লি আগে থেকেই কারাগারে আছেন। চোও এর জামিন আবেদন বাতিল হয়েছে।
পুলিশ গত সপ্তাহে তিয়ানআনমেনে ‘হতাহতদের’ উৎসর্গ করা জুন ৪ জাদুঘর প্রাঙ্গনেও ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে।
চলতি মাসের ২ জুন থেকে বন্ধ জাদুঘরটি সম্প্রতি ‘৮৯৬৪ জাদুঘর’ নামে অনলাইনে ফের চালু হয়েছে। এটি এখন হংকং অ্যালায়েন্স থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্রভাবে চলছে।
এ কর্মীরা গত বছর আলো জ্বালিয়ে বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে ১৯৮৯ সালে হওয়া কথিত ওই দমনপীড়নে হতাহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে চীনের হাতে যাওয়া হংকংয়েই সাধারণত প্রতি বছরের ৪ জুন তিয়ানআনমের স্মরণে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শহরটিতে সমাবেশ করায় কড়া বিধিনিষেধ থাকায় পুলিশ গত বছর ও এ বছর জুনে আলো জ্বালানোর কর্মসূচি করার অনুমতি দেয়নি।
২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের যে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে, তারপর এ ধরনের কর্মসূচি করতে না দেওয়াকে অনেকে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াদের মুখ চেপে ধরার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৮৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে ছাত্রসমাজ। গণতন্ত্রের দাবিতে ছাত্রদের বিক্ষোভ দমনে সরকার যুদ্ধ ট্যাংক নামায়। এ অভিযানে নিহত হন অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। এরই স্মরণে বিক্ষোভ আয়োজন করে থাকেন হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিরা। তারা এই দিনটিকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে।
এর মাসকয়েক আগে হংকংয়ে দুই বছর আগে অবৈধ সমাবেশের অভিযোগে শীর্ষ সাত গণতন্ত্রপন্থী নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সেখানকার ‘গণতন্ত্রের পিতা’খ্যাত এক বর্ষীয়ান আইনজীবী ও এক মিডিয়া মোগল।
স্থানীয়ভাবে ‘গণতন্ত্রের পিতা’খ্যাত ওই আইনজীবীর নাম মার্টিন লি। আর দোষী সাব্যস্ত মিডিয়া মোগলের নাম জিমি লাই।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে হংকংয়ে একটি রাজনৈতিক আয়োজনের কারণে মার্টিন লি, জিমি লাইসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই অভিযোগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাতজন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশটিতে মার্টিন লিয়ের মতো ব্যক্তিত্বসহ গণতন্ত্রপন্থিদের কারাদণ্ড হতে যাওয়ার অর্থ হলো, হংকংয়ে ভিন্ন মতাবলম্বীদের জায়গা আর নেই বললেই চলে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৬
আপনার মতামত জানানঃ