অবশেষে জোনাকি বেগমকে কল করে পাওয়া গেল।কল ধরেই তিনি বললেন, কি জানতে চাও বলে ফেল। আমিও কাল বিলম্ব না করে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরিমনির আটকাদেশ বিষয়ে জানতে চাইলাম। জবাবে জোনাকি বেগম বললেন –বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক এবং আলোচনার অযোগ্য বটে। কারণ, পুরুষ সামন্তবাদী সমাজে পরী আসবে পরী যাবে এটাই নিয়ম। কার্ল মার্কস বলেছেন, ইতিহাসে যদি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে – তার প্রথমটা হয় ট্রাজেডি, আর বাদবাকিগুলো হয় প্রহসন। গ্রীক রাজবধু হেলেনা বা মুঘল রাজ প্রেমিকা আনারকলি যদি ট্রাজেডি হয় – পরীমনি জাতীয় বাকী সব ঘটনা হলো প্রহসন। মানুষ হিসেবে পরিমনি আমার কাছে ঈশ্বরের খলিফা, তবে নায়িকা হিসেবে সে সমাজের নিচুস্তরের অশিক্ষিত লোকজনের তারকা। পরীর দর্শকেরা সিনেমা দেখে আর্টের জন্য নয়, তারা পরীর বড় স্তন, থলথলে পেট বা নাদুসনুদুস রান দেখার জন্যই পরীর মুভি দেখে। পরীর মুভি আমিও দেখি নাই, তুমিও দেখো নাই, অথবা তার পক্ষে- বিপক্ষে লেখালেখি করা কিংবা টকশো করা কেউ দেখে নাই। তাহলে পরী কিভাবে সমাজের উঁচু তলায় পৌঁছলো? যেহেতু আমাদের দেশে রাশিয়ান, লাতিন অথবা রোমানিয়ান সুন্দরী পাওয়া যায়না সেহেতু টাকার ব্যাপারীদের পরীদেরকে দিয়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর বিকল্প নেই। এখানে পরীর প্রতি প্রেম অথবা পরীর যোগ্যতা খুঁজে বেড়ানো আর লুঙ্গি ফরহাদ মজহারের দর্শন অধ্যয়নের মতো বাতুলতা বই আর কিছুই নয়। তাই তার পক্ষে- বিপক্ষে বহু লেখালেখি দেখে মনে হলো এর সিংহভাগই ওয়াইড বা নো বল করে উইকেটের প্রত্যাশায় আবেদন করার মতো।জোনাকি বেগমকে বললাম, আমি আপনার বয়ান ভালোভাবে বুঝতে পারতাম যদি আরেকটু বিশ্লেষণ করে বলতেন। একথা শোনার পর তিনি বললেন, তোমার মতো মুরিদ নিয়ে আমি পড়েছি মহা যাতনায়। তোমাকে একটা সহজ কথা বুঝিয়ে বলা যত কঠিন, কিলিয়ে কাঁঠাল পাঁকানো ততই সহজ। আমি নিচুঁ গলায় লজ্জাবনত হয়ে বললাম, আজ্ঞে সাহেবান। মধুরতম হাসি দিয়ে জোনাকি সাহেবান বললেন, রুবেল মিয়া – তোমারে কিন্তু বড়ই স্নেহ করি, যদিও তুমি আমার বছর দশেক বড়। একথা বলে জোনাকি বেগম বললেন……
আদি পুস্তক তৌরাতের ভাষ্যমতে, একজন আদমের জন্য সহধর্মিণী তৈরির ক্ষেত্রে বিধাতাকে তিনবার উদ্যোগ নিতে হয়। সকলের জানা, প্রথমে লিলিথ নামীয় এক সুন্দরী নারীকে আদমের সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করা হয়। লিলিথ আদমের কাছে সমঅধিকার দাবী করে একচেটিয়া আদমের বুকের নিচে শুয়ে ভর্তা হতে চায়নি। উত্তেজিত আদম তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করলে লিলিথ মন্ত্র উচ্চারণ করে হাওয়ায় মিশে যায়।
আদি পুস্তক তৌরাতের ভাষ্যমতে, একজন আদমের জন্য সহধর্মিণী তৈরির ক্ষেত্রে বিধাতাকে তিনবার উদ্যোগ নিতে হয়। সকলের জানা, প্রথমে লিলিথ নামীয় এক সুন্দরী নারীকে আদমের সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করা হয়। লিলিথ আদমের কাছে সমঅধিকার দাবী করে একচেটিয়া আদমের বুকের নিচে শুয়ে ভর্তা হতে চায়নি। উত্তেজিত আদম তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করলে লিলিথ মন্ত্র উচ্চারণ করে হাওয়ায় মিশে যায়। তারপর বিধাতা আদমের জন্য দ্বিতীয় সঙ্গীনি সৃষ্টির সময় আকস্মিকভাবে আদম তা দেখে ফেলে, এতে আদমের প্রচন্ড ঘেন্না বোধহয়। তাই বিধাতা তার দ্বিতীয় সঙ্গীনীকে নিরুদ্দেশ করে ফেলেন। এরপর তৃতীয় বিবি হিসেবে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয় যাকে স্বর্গপতনের জন্য দায়ী করা হয় এবং শাস্তি স্বরুপ প্রসব যন্ত্রনা দেওয়া হয়। এখন তোমাকেই বুঝতে হবে সৃষ্টির প্রারম্ভে নর- নারীর রসায়ন এবং নারী বিপ্লবী নাকি বিচ্যুত। যদি বুঝতে সক্ষম হও তবে বুঝবা নারীর প্রতি আদি দৃস্টিভঙ্গি যার প্রবাহ বর্তমান পুরুষ সামন্তসমাজ বাদে এখনো প্রবাহমান। তুমি নিশ্চিত জান, সংস্কৃতিতে ‘লাঙ্গল’ আর ‘লিঙ্গ’ একই ধাতু হতে উৎপন্ন। অন্যদিকে পবিত্র সীতা ও রাম শব্দ দুটি বস্তুত যোনি ও লিঙ্গের ধারণাই ইঙ্গিত করে। আমি ব্যাখ্যা দাবী করলে জোনাকি বেগম বললেন, রাম শব্দের অর্থ হলো চাষ করা, রমন করা অথবা কর্ষন করা। আর সীতা শব্দের অর্থ হলো, লাঙ্গলের ফলার দাগ বা হলরেখা। অর্থাৎ, অন্য সকল প্রধান পবিত্র ধর্মের বিধান অনুযায়ী সীতা বেগমেরা রাম সাহেবদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ।
আমি বললাম আচ্ছা, তারপর? জোনাকি বেগম বললেন- হরিণকে দেখলে বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে তার তুলতুলে মাংস খাওয়ার জন্য। এজন্য কবির ভাষায়, হরিণ নিজেই দায়ী। অর্থাৎ,’আপনা মাংসে হরিণা বৈরি।’ তেমনি পরিমনিদের উপর রাষ্ট্রীয় লালিত দুষ্টু বাঘেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার থলথলে মাংসের লোভে। এতে পরীরাই দায়ী। কারণ তার ফর্সা একখানা শরীর আছে। আবার, বন্টনের সময় পরীরা সকল নেড়ের প্রতি ইনসাফ করেনি বা সুষম বাটোয়ারায় রাজি হয়নি। আহলে কিতাবাদীদের বড়মিঞা অর্থাৎ ইহুদিরা প্রত্যাহ ভোরবেলায় প্রার্থনা করে, বিধাতাকে ধন্যবাদ যেহেতু তিনি আমাকে নারী হিসেবে সৃষ্টি করেননি, পাশাপাশি নারীরও কৃতজ্ঞ চিত্তে প্রার্থনা করেন, বিধাতাকে ধন্যবাদ, যিনি আমাকে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। শুধুমাত্র ইয়োরোপে ১৪০০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যেই পাঁচ লাখ নিরাপরাধ নারীকে ডাইনী উপাধি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঈশ্বরের সেবক পুরোহিতদের মধ্যমে। উল্লেখ যে, নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলো সে সব অসহায় নারী যারা সাহেবদের মনোরঞ্জনে রাজি হয়নি অথবা সাহেবদের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল। তৎকালীন সময়ে পরীদের ডাইনি উপাধি দিয়ে হত্যা করানো হতো ধর্মের বেসাতিদের দ্বারা, আর বর্তমানে সে মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে মহামতি গণতান্ত্রিক সরকার বাহাদুরেরা। যে সমাজে পুত্র মাকে সতীত্ব শেখায় সে সমাজ ব্যবস্থায় রাতের প্রয়োজন না মেটালে জেলের দুয়ার খুলতে হয়। বিলেত ফেরত শিক্ষিত এবং মন্ত্রী আবদুল করিম গজনভি এবং খালা বেগম রোকেয়ার ঐতিহাসিক ঘটনাটা পড়লে তুমি বুঝতে পারবে।
যেহেতু, কথার পিঠে কথা জাগে সেহেতু বহু কথা বলে ফেললাম। ব্যক্তি পরিমনিকে আমি চিনি না। সমাজে বা জাতীয় জীবনে পরী আসবে পরী যাবে। এতে কারও গাছের বেল পাকবেনা অথবা ভাতের চালও নরম হবেনা। এটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই। শতভাগ শরীয়াহ কায়েম করলেও বাংলার মুমিন মুসলমানরা আফগান না গিয়ে আমেরিকায় যাবে, আর শতবছর তুমি পুরুষকে নারী বিষয়ক সবক দিলেও তোমার নারী নিয়ে সুঁড়সুঁড়ি যাবেনা। কারণ, তোমারা শুধু উদ্বেলিত হওয়ার পরিবর্তে উত্তেজিত হতেই জানো। একথা বলে কখন যে জোনাকি বেগম কলটা কেটে দিলো আমি টেরই পেলাম না।
মোহাম্মদ রুবেল, ভিয়েনা।
আপনার মতামত জানানঃ