সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে খুব বেশি দূরে না থাকলেও দেশ এখনো পড়ে আছে অনুন্নত দেশের স্তরেই। কাগজপতে বাংলাদেশকে এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র বলা হচ্ছে, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশ এখনো তেমন একটা ভালো করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি ধনী দেশের যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ১৯১টি দেশের মধ্যে ১৪৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ এশিয়ায়ও দেশের অবস্থান একেবারে নিচের সারিতে।
আইএমএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ক্রয়ক্ষমতার সমতা বা পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ধনী দেশ মালদ্বীপ। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ২৩ হাজার ৩১২ ডলার। আর বাংলাদেশে ৫ হাজার ২৮ ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ায় বেশির ভাগ দেশের তুলনায় কম। এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ।
দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা। দেশটির পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ১৩ হাজার ৮৯৭ ডলার। তৃতীয় ভুটান (৯ হাজার ৮৭৬ ডলার), চতুর্থ ভারত (৮ হাজার ৩৭৮ ডলার), পঞ্চম পাকিস্তান (৫ হাজার ৮৭২ ডলার), ষষ্ঠ বাংলাদেশ (৫ হাজার ২৮ ডলার), সপ্তম নেপাল (৩ হাজার ৩১৮ ডলার) ও অষ্টম আফগানিস্তান (২ হাজার ৯৫ ডলার)।
অপরদিকে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯১টি দেশের মধ্যে ১৪৩তম। মালদ্বীপ ৬৬তম, শ্রীলঙ্কা ৯৯তম, ভুটান ১১২তম, ভারত ১২৪তম, পাকিস্তান ১৩৮তম, নেপাল ১৬২তম ও আফগানিস্তান ১৭৬তম।
তালিকার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশ কাতার। পিপিপি জিডিপিতে দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ ডলার। দুই দশক ধরেই তারা শীর্ষ ধনী দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী হলো চীনের বিশেষায়িত অঞ্চল ম্যাকাও। পিপিপি জিডিপিতে তাদের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৬২ ডলার। দেশটি শিগগিরই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লুক্সেমবার্গ। পিপিপি জিডিপিতে দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ১২ হাজার ডলার। লুক্সেমবার্গকে ইউরোপের ট্যাক্স হ্যাভেন বা করস্বর্গ বলা হয়। তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৫ হাজার ৭০০ ডলার। এশিয়ার অন্যতম করের স্বর্গরাজ্য বা ট্যাক্স হ্যাভেনের দেশ এটি।
[soliloquy id=”2121″]
বিশ্বে আয়ারল্যান্ডের অবস্থান পঞ্চম। দেশটির পিপিপিতে মাথাপিছু জিডিপি ৮৭ হাজার ডলার। ব্রুনেই দারুস সালামের অবস্থান ষষ্ঠ। পিপিপি জিডিপিতে দেশটির মাথাপিছু আয় ৮৫ হাজার ডলার। বৈশ্বিক তালিকায় নরওয়ের অবস্থান সপ্তম। দেশটির পিপিপিতে মাথাপিছু আয় ৭৯ হাজার ৬০০ ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান অষ্টম। পিপিপিতে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৭০ হাজার ৪০০ ডলার। কুয়েতের পিপিপি ডলারে মাথাপিছু জিডিপি ৬৭ হাজার ৯০০ ডলার। বৈশ্বিক তালিকায় দেশটির অবস্থান নবম। তালকিায় সুইজারল্যান্ডের অবস্থান দশম। পিপিপি ডলারে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৬৭ হাজার ৬০০ ডলার।
বৈশ্বিক এই তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে গরিব দেশ বুরুন্ডি। দেশটির পিপিপিতে মাথাপিছু আয় ৭২৭ ডলার। এরপর রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (৮২৩ ডলার), কঙ্গো (৮৪৯ ডলার), ইরিত্রিয়া (১ হাজার ৬০ ডলার), নাইজার (১ হাজার ১০৬ ডলার), মালায়ি (১ হাজার ২৪০ ডলার), মোজাম্বিক (১ হাজার ৩০৩ ডলার), দক্ষিণ সুদান (১ হাজার ৬০২ ডলার) ও সিয়েরা লিওন (১ হাজার ৬৯০ ডলার)।
আইএমএফের তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন ও হাউমাচ ডটনেট সম্প্রতি এই তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে মূলত একটি দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানকে তুলনীয় করার জন্য নমিনাল জিডিপিকে ‘পিপিপি ডলারে জিডিপি’তে রূপান্তরিত করে বিশ্বের ১৯১টি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিপুল অর্জনের প্রচারণাকে খানিকটা হলেও ম্লান করে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মিই/আরা/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ