ইরানে ১৯৮৮ সালে ভিন্নমতাবলম্বীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ‘জড়িত’ থাকার অভিযোগে দেশটির কর্মকর্তা হামিদ নূরীর বিচার শুরু করেছে সুইডেন। গতকাল মঙ্গলবার ইরানের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইউরোপের দেশটিতে বিচার শুরু হয়। এর আগে ৬০ বছর বয়সি এ কর্মকর্তা সুইডেনে এলে, তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অসংখ্য নির্বাসিত ইরানি, সাবেক বন্দি এবং ভুক্তভোগীদের পরিবার গত মঙ্গলবার হামিদ নূরীর বিচার শুরু হওয়ায় স্টকহোমে আদালতের বাইরে জমা হয়।
বহু বছর ধরে ইরানের শাসনব্যবস্থা এই হত্যাকাণ্ড বিশ্বের কাছে থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে, গোহারদাশত কারাগারের একজন বন্দি আহমদ ইব্রাহিম একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আশা করি এই বিচারকার্য আমার বন্ধুদের সাথে যা হয়েছে তাকে বিশ্বের সামনে নিয়ে আসবে। অনৈতিক এই হত্যাকাণ্ডের উপর আলো ফেলবে।
হামিদ নূরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা, বন্দিদের ফাঁসির কামরায় নিয়ে যাওয়া এবং আইনজীবীদের বন্দিদের নাম সংগ্রহ করতে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে।
সুইডিশ প্রসিকিউটররা তেহরানের নিকটবর্তী আলবুর্জ প্রদেশের রাজধানী কারাজের গোহারদশত কারাগারের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর হামিদ নূরীর বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ১৯৮৮ সালে পিপলস মুজাহিদিন বা এমইকে নামে পরিচিতি দলের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক বন্দির জীবন নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
এই প্রথমবারের মতো ১৯৮৮ সালে ইরাকের সাথে সম্পর্কযুক্ত ইরানি বিরোধী দলের প্রায় ৫ হাজার বন্দির হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কারও বিচার শুরু হল।
ইরান ও ইরাক যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা এই হত্যাকাণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আসছে। থে ইব্রাহিম রাইসি ক্ষমতা গ্রহণের পর এই হত্যাকাণ্ড নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে।
ধারণা করা হয়, সে সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নির্দেশে দেশটিতে এমইকে সংশ্লিষ্ট প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ বিষয়টি ইরানে অত্যন্ত বিতর্কিত, যার সঙ্গে ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নামও জড়িয়ে আছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে রাইসি তেহরানের নিকটবর্তী ইরানের শহর কারাজের বিচার বিভাগে যোগ দেন। ১০ বছরেরও কম সময়ে তিনি বিচার বিভাগে উল্লেখযোগ্য পদোন্নতি পান। এর পর কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে একটি ট্রাইবুন্যালের সদস্য হন যাকে বিরোধীরা ‘ঘাতক কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করে।
১৯৮৮ সালে এই কমিটি অসংখ্য রাজনৈতিক বন্দিকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এদের মধ্যে মার্কসবাদী, বামপন্থি রাজনীতিবিদ এবং পিপলস মুজাহিদিন অরগানাইজেশন অব ইরানের (এমইকে) বহু সদস্য ছিলেন।
গত সপ্তাহেই ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রাইসি যিনি ১৯৮৮ সালে ওই ট্রাইবুন্যালের চারজন বিচারকের একজন ছিলেন; যারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য হাজার হাজার বন্দির ফাঁসির আদেশ দেন।
যদিও রাইসি মৃত্যুদণ্ডের সাথে তার যেকোনও প্রকার সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। তবে একইসাথে তখনকার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দ্বারা পরিচালিত এই হত্যাকাণ্ডকে ফতোয়া অথবা ধর্মীয় শাসনের নামে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪২৩
আপনার মতামত জানানঃ