নিবন্ধন করার পরও অনেকে টিকা নিতে পারছেন না। টিকা নেওয়ার খুদে বার্তার (এসএমএস) জন্য কারও কারও দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ সরকারের হাতে এখন পর্যাপ্ত টিকা নেই। তাই নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিদের সময়মত টিকা দেয়াই এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ।
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বাড়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে টিকা পেতে নিবন্ধনের সংখ্যা। কিন্তু নিবন্ধনের তুলনায় দেশে বর্তমানে টিকার ঘাটতি দেড় কোটির বেশি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে আগামী ১২ আগস্ট থেকে সারাদেশে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গণটিকা কার্যক্রম
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য এখন পর্যন্ত তিন কোটির বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছে। এদিকে এ অব্দি দেশে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ জন মানুষ করোনা (কোভিড-১৯) টিকার আওতায় এসেছে। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জন ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭৩ জন।
এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার ৫০ জন। আর নারী ৬১ লাখ ২৬ হাজার ৩৯৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৩০ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩ জন ও নারী ১৮ লাখ ৪ হাজার ১১০ জন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড নিয়েছেন দেশের ১ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০ জন মানুষ। চীনের সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন ৭০ লাখ ৩৯ হাজার ১৮৩ জন। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নিয়েছেন ৭৭ হাজার ৮৪৫ জন। আর মডার্নার টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩২ জন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৬৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫০২ জন ও নারী ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৮ জন। এই টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৭ জন দ্বিতীয় ডোজ ও ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জন প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণকারী পুরুষ ২৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪০৫ জন ও নারী ১৭ লাখ ২ হাজার ৫৯২ জন। আর প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারী ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৯৭ জন পুরুষ ও ২২ লাখ ১০ হাজার ৯৬৬ জন নারী।
টিকার ঘাটতি
অথচ টিকার সঙ্কটে আছে দেশ। গালভরা গল্প শেষ হয়েছে ক’দিন আগেই। দেশে গতকাল পর্যন্ত ১ কোটি ৯৬ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ১৭ লাখ ডোজসহ সরকারের হাতে আছে মাত্র ৭৬ লাখ ডোজ টিকা। সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ কোটি ৭৩ লাখের বেশি টিকা।
নিবন্ধতকৃতদের টিকা নিশ্চিত করতে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যু বেশি। তাই আমরা এখন প্রায়োরিটি বেসিসে বয়স্ক ও গ্রামের মানুষকে টিকা দেয়ার কথা ভাবছি। তবে এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।”
১০ আগস্ট কোভিড-১৯ টিকা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, “১২ আগস্টের পর সারাদেশে মডার্নার ফার্স্ট ডোজ টিকা বন্ধ করে দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ শুরু করতে হবে। ১২ আগস্টের পরও যেসব সেন্টারে মডার্নার টিকা উদ্বৃত্ত থাকবে তারা যেনো দ্রুত ১ম ডোজের টিকা দেয়া শেষ করে ২য় ডোজ টিকা দেয়া শুরু করে।”
এছাড়া ১৪ আগস্ট থেকে সারাদেশে আবশ্যিকভাবে সিনোফার্মের ২য় ডোজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে বর্তমানে যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে তা থেকে আগামী ১২ আগস্টের পর মর্ডানার প্রায় ২৪ লাখ ডোজ টিকা রেখে দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য।
এছাড়া ফাইজারের ৩৩ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৮ লাখ টিকাও দেয়া হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় ডোজ। সিনোফার্মের টিকা হাতে রয়েছে মাত্র ৩০ লাখ ডোজ। যদিও এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ৬৮ লাখের বেশি মানুষ।
এদিকে, সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৫ অগাস্টের মধ্যে করোনাভাইরাসের আরও ৫৪ লাখ টিকা দেশে আসবে। এছাড়া চীন থেকে কেনা আরও ৫০ লাখ টিকা আসবে এ মাসে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীন সেপ্টেম্বরে ১০-১৫ মিলিয়ন, অক্টোবরে ২৩ মিলিয়ন আর নভেম্বরে ২৩ মিলিয়ন টিকা দেবে। পাশাপাশি কোভ্যাক্সের টিকা আসবে। ছয় মিলিয়ন ফাইজারের টিকাও পাওয়ার কথা সেপ্টেম্বরে। আমরা আশা রাখি ভারতের কাছে যে টিকা রয়ে গেছে, তাও পাব। কিন্তু এখনও কোনো রকমের কনফার্ম তারিখ তারা দেয়নি।
নিবন্ধন বেড়েছে হঠাৎই
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার টিকার নিবন্ধন বেড়ে যাওয়ার কারণ তরুণ জনগোষ্ঠীকে সুযোগ দেওয়া। এ বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে যখন প্রথম টিকার নিবন্ধন শুরু হয়। তখন বলা হয়েছিল, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী এবং নানা পেশার সম্মুখসারির কর্মীরা আগে নিবন্ধনের সুযোগ ও টিকা পাবেন।
এরপর ক্রমান্বয়ে বয়সসীমা কমতে থাকে, বিভিন্ন সময় বয়সসীমা কমিয়ে ৪০, ৩৫, ৩০ ও ২৫ বছর করা হয়। সর্বশেষে বলা হয়েছে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কেউ করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
বয়সসীমা কমিয়ে আনার সঙ্গে নিবন্ধন দ্রুত বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক যেমন আছে, তেমনি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কারণেও নিবন্ধন বেড়েছে। গত শনিবার থেকে করোনার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। যদিও সরকার বলেছিল, সম্প্রসারিত টিকাদান কেন্দ্রে টিকা নিতে নিবন্ধন প্রয়োজন হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে এনে কেন্দ্র থেকে টিকা নেওয়া যাবে। তবে এটা জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
চাঁদপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য টিকাদান বন্ধ ঘোষণা
চাঁদপুরে করোনা প্রতিরোধী টিকার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথম ডোজের টিকা দেয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে আজ (১১আগষ্ট) বুধবার থেকে।
তবে কবে নাগাাদ আবার প্রথম ডোজের টিকা চালু হবে তা বলতে পারছেনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছেন এমন ব্যাক্তিদের মজুদ থাকা সাপেক্ষে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে বলে জানা যায় ।
দ্বিতীয় ডোজের টিকা সীমিত রয়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, দুই-তিন দিনের মধ্যে টিকা আসলে আমরা আবার আগামী শনিবার থেকে টিকা দেয়া শুরু করবো। দ্বিতীয় ডোজ মজুদ থাকা সাপেক্ষে আমরা টিকা দেয়া চলমান রাখবো।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ