দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একের পর এক পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ আসছে। সম্প্রতি সময়ে ক্রমবর্ধমানভাবে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অনেকে চাকরি হারাচ্ছেন, অনেকের জায়গা হচ্ছে জেলহাজতে। তবুও এই অপরাধ প্রবণতা কমছে না পুলিশের।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি চট্টগ্রামে অভিযানে গিয়ে ইয়াবা ও টাকা রেখে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় তিন পুলিশ সদস্য এখন কারাগারে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৯ আগস্ট) আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র মতে, সাতকানিয়া থানার তিন পুলিশ সদস্য ইয়াবা ও টাকার বিনিময়ে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে আজ মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) চট্টগ্রামের জেলা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওই তিন পুলিশ সদস্য হলেন ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল শাহ মোহাম্মদ হাসান, আরাফাত নাজিম উদ্দিন ও বিমল চাকমা।
জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট ঢেমশার নাপিতের চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক মাদক কারবারিকে আটক করা হয়। এ সময় মাদক কারবারির কাছে থাকা ইয়াবা ও মাদক বিক্রির টাকা অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যরা জব্দ করেন।
তবে তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে অবহিত করেননি। তারা ইয়াবা ও টাকা রেখে আসামিকে ছেড়ে দেন। বিষয়টি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কানে আসে। এরপর দুই দিন ধরে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে ওই তিন কনস্টেবলের কাছে থাকা ৪৬৫ পিস ইয়াবা ৯০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
এই ঘটনায় সাতকানিয়া ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে তিন পুলিশ কনস্টেবলসহ আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় তিনজনকে সোমবার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
এমন ঘটনা নতুন নয় পুলিশের ক্ষেত্রে। পুলিশের মাদক মামলায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ছে দিনদিন। গত জুন মাসে দুই হাজার ইয়াবা বড়িসহ দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কনস্টেবল আবদুস সামাদ ও প্ররক্ষা (প্রোটেকশন) বিভাগের কনস্টেবল আবু সাঈদ।
জানা যায়, বেইলি রোড এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করা অবস্থায় গোপন খবরের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালিয়ে দুই হাজার ইয়াবা বড়িসহ পুলিশ কনস্টেবল সামাদ ও সাঈদকে আটক করেন। পরে রাতে তাদের রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়।
সামাদ ও সাঈদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন এক র্যাব কর্মকর্তা। রমনা থানার পুলিশ তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠালে শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে মার্চ মাসে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিদেশি পিস্তল ও ফেনসিডিলসহ পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে র্যাব।
সূত্র মতে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি দল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করে। এসময় একটি সাদা মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল, ২৫ রাউন্ড গুলি, ২৪০ বোতল ফেনসিডিল ও দুটি হ্যান্ডকাফসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
আটকদের একজন পুলিশের উপ-পরিদর্শক। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। মাইক্রোবাসটি কুমিল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল।
এদিকে, গত ডিসেম্বরে দিনাজপুরে মাদক সেবনের অভিযোগে ৫০ পুলিশ সদস্যের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে মাদক সেবনের প্রমাণ পাওয়ায় ছয় পুলিশ সদস্যকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার চাকরি থেকে তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর প্রথম ধাপে দিনাজপুর জেলার ৫০ জন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে ছয় জনের শরীরে মাদকের নমুনা শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গত ৩১ ডিসেম্বর ওই ছয় পুলিশ কনস্টেবলকে স্থায়ীভাবে চাকরীচ্যুত করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৫১
আপনার মতামত জানানঃ