মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোনো মুসলিমকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সিনেটে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এ পদে নিযুক্ত হবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাশেদ হোসেন।
রাশেদ হোসেন নামে এই কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত পদমর্যাদার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট লার্জ হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। রাশেদ হোসেনের এ মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন ইহুদিরাও।
এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, ৪১ বছর বয়সি রাশেদ হোসেনই প্রথম মুসলিম, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত পদমর্যাদায় নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।
সূত্র মতে, এর আগে রাশেদ হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের পার্টনারশিপ অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাজ্ঞেজম্যান্ট বিভাগের প্রধান ছিলেন। ওবামার শাসনামলে তিনি ওআইসির মার্কিন দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত খিজির খানকে ইউসিআইআরএফের (ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম) কমিশনার হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ কমিশনের কাজ হচ্ছে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই মুসলিমদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চলতি বছরের জুন মাসে দেশটির ইতিহাসে প্রথম কোনো মুসলমান ফেডারেল বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান জাহিদ কুরাইশি।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বেঞ্চে কখনোই কোনো মুসলমান বিচারক ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রে জনতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যের পাশাপাশি পেশার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে বলে সে সময় মন্তব্য করেন সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক দলের নেতা চাক শুমার।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জাহিদ ২০১৯ সালে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ পান। এবার তিনি নিউ জার্সির ফেডারেল বেঞ্চে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেলেন। নিউ জার্সি থেকেও এই প্রথম কোনো এশীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি ফেডারেল কোর্টের বিচারক হন।
এছাড়া মার্কিন নির্বাচনে আগে থেকে মুসলিম প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও ২০২০ সালের নির্বাচনে সর্বাধিক ৯ জন মুসলিম প্রার্থী জয়লাভ করেন। বিজয়ী ৯ মুসলিম প্রার্থীর অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি স্থাপন করেছেন।
দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.১ শতাংশ তথা ৩৬ লাখের বেশি মুসলিম। ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিসাবে তারা তৃতীয় বৃহত্তম। দেশটির সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৪০ সালে মুসলিমরা হবে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী।
উল্লেখ্য, ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী ঘটনার পর থেকে আমেরিকান মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ সালে পরিস্থিতি ছিল খুবই উদ্বেগজনক। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১৮০ টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ঐ রিপোর্ট বলা হয় গড়ে মাসে ১৮টি মুসলমান বিরোধী হামলা ঘটে ঐ ১২ মাসে। এর মধ্যে ১২টি হত্যাকান্ড, ৩৪টি শারিরীক নির্যাতন, ৪৯টি মৌখিক হুমকী, ৫৬টি হিংসাত্মক ঘটনা, ৯টি অগ্নি সংযোগ ও ৮টি গুলী বা বোমা হামলার ঘটনা। তবে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। দেশটির প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে যুক্ত হচ্ছেন মুসলিম অধিবাসীরা।
আপনার মতামত জানানঃ