শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে আর অপেক্ষা না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বে কমপক্ষে ৬০ কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন অচল হয়ে আছে। এই অচল অবস্থা কাটাতে যত দ্রুত সম্ভব অবশ্যই বন্ধ স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর এএফপি
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) জেনেভায় জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন। এসময় তিনি বলেন, এই অবস্থা চলতে পারে না।
জেমস এল্ডার আরো বলেছেন, বিভিন্ন সরকার কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবিলা এবং এই রোগের বিস্তার যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এই জটিল পছন্দের বিষয় তিনি মানেন। তার মতে, তা সত্ত্বেও সব কিছুর মধ্যে সবার শেষে স্কুল বন্ধ করা উচিত এবং সবকিছুর আগে স্কুল খুলে দেয়া উচিত। তিনি স্কুল খুলে দেয়ার আগে বিভিন্ন দেশে বার এবং পাবগুলো খুলে দেয়াকে এক ভয়াবহ ভুল বলে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, সব শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া পর্যন্ত স্কুল খোলার জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। মহামারিতে অর্থনৈতিক কঠিন অবস্থা সত্ত্বেও সরকারগুলোকে তাদের শিক্ষা বিষয়ক বাজেট সুরক্ষিত রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের শিশুরা এখন তাদের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আছে। পক্ষান্তরে পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ স্কুলবয়সী শিশু বর্তমানে স্কুলের বাইরে রয়েছে। স্কুলগুলো বন্ধ করা হয়েছে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে। এর ফলে ওই অঞ্চলে কমপক্ষে ৩ কোটি ২০ লাখ শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে অথবা খুলে দেয়া ক্লাসে ফিরে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। করোনা মহামারি আঘাত করার আগে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ। তার সঙ্গে এই সংখ্যা যোগ হয়েছে।
এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক দেশে মহামারির কারণে কমপক্ষে ২০০ দিন বন্ধ রয়েছে স্কুল।
জেমস এল্ডার বলেছেন, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ১৮টি দেশ এবং ভূখণ্ডে স্কুলগুলো হয়তো পুরোপুরি, না হয় আংশিক বন্ধ। তার ভাষায়, বিশ্বজুড়ে শিক্ষা, নিরাপত্তা, বন্ধুত্ব, খাদ্যের স্থানে জায়গা করে নিয়েছে উদ্বেগ, সহিংসতা এবং টিনেজ মেয়েদের অন্তঃসত্ত্বার বিষয়।
উগান্ডার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই দেশটিতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ বছর জুন পর্যন্ত ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েদের শতকরা কমপক্ষে ২০ ভাগের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে ‘প্রজন্মগত বিপর্যয়’ এড়াতে অবিলম্বে স্কুল খুলে দেওয়ার আহ্বান জানায় জাতিসংঘের দুই শীর্ষ সংস্থা ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে। লাখ লাখ শিশুর পড়াশোনা এখনও ব্যাহত হচ্ছে। ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে, যা ১৫ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটা চলতে পারে না।
ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্কুলে যেতে না পারার কারণে শিশু এবং তরুণ জনগোষ্ঠী যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে নেয়া যাবে না। শেখার ক্ষতি, মানসিক সংকট, সহিংসতা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া থেকে শুরু করে স্কুলভিত্তিক খাবার ও টিকা না পাওয়া বা সামাজিক দক্ষতার বিকাশ কমে যাওয়া— শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তাদের শিক্ষাগত অর্জন এবং সামাজিক সম্পৃক্ততায় এর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সংক্রমণের প্রধান চালিকাশক্তিগুলোর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো নেই। এদিকে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশমন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সামাল দেয়া সম্ভব। স্কুল খুলে দেয়া বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এবং যে কমিউনিটিতে স্কুল অবস্থিত সেখানকার মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেয়া উচিত।
ইউনিসেফ বলেছে, বিশ্বজুড়ে বাসায় বসে পড়াশোনা এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে স্কুল বন্ধ থাকায় কমপক্ষে ৮ কোটি শিক্ষার্থীর বাসায় বসে পড়াশোনা করার প্রয়োজনীয় সুবিধা নেই। উগান্ডায় স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে ৩০৬ দিন ধরে। সেখানে শতকরা মাত্র ০.৩ ভাগ বাড়িতে আছে ইন্টারনেট সংযোগ।
জেমস এল্ডার বলেন, বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব মতে, এই মহামারিতে এই প্রজন্ম ১০ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হারাবে।
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। ক্লাস চলছে অনলাইনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে এভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাবি উঠেছে সশরীরে ক্লাস করার সুযোগ দিতে।
গত জুনে শিক্ষাঙ্গন খোলার কথা থাকলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের জনসমাগম সীমিত করেছে যা এবার শাটডাউন নামে পরিচিতি পেয়েছে।
সংক্রমণের মাঝে শিক্ষার্থীদের করোনা থেকে সুরক্ষায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। টিকা দেওয়া শেষ হলে অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে পাঠদান চালু আছে, ভবিষ্যতে অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতিকে আরও উন্নত করতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার রাতে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের আয়োজনে ‘জাতি গঠনে শিক্ষার ভূমিকা: বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন ও বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ১২ দিনের মাথায় টেলিভিশনে ক্লাস শুরু করা হয়েছে। অনলাইন ক্লাস অস্বীকার করার সুযোগ নেই। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমেও গুরুত্ব দিতে হবে। যেটি আমাদের শুরু করতে আরও কয়েক বছর লেগে যেত, করোনার কারণে তা আমরা এখনই শুরু করে ফেলেছি।
কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল তৈরি হচ্ছে। এগুলো থেকে প্রদত্ত ডিগ্রির সার্টিফিকেট গুলো সমমানের প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগাতে পারে সে চেষ্টা চলছে। আইসিটি স্কিল, ভাষার শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিদেশি ভাষা এখন টুল হয়ে গেছে। কমিউনিকেশন স্কিল, কোলাবোরেশান স্কিল, ক্রিটিকাল থিংকিং স্কিলগুলো অর্জন করা প্রয়োজন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৩
আপনার মতামত জানানঃ