যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে বিপর্যস্ত বিস্তির্ণ এলাকা। গত ১৪ জুলাই ক্যালিফোর্নিয়ায় শুরু হওয়া এই দাবানলের নামকরণ করা হয় ডিক্সি ফায়ার। দাবানলে এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। তীব্র দাবানলটি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন দেশটির কর্মকর্তা ও দমকল কর্মীরা। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানলটি এখন পর্যন্ত এক লাখ ৯০ হাজার একর বা ৭৭ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা ভস্মীভূত করেছে ।
অন্যদিকে শনিবার(২৪ জুলাই) দক্ষিণ অরেগনের বুটলেগের প্রায় অর্ধেক এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি দমকল কর্মী কাজ করছেন। অরেগনের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম এই দাবানলটিতে কমপক্ষে ১৬০টি বাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার পর অরেগনের এই দাবানলে পুড়ে যাওয়া এলাকার আয়তন লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের চেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে অরেগনসহ ১৩ অঙ্গরাজ্যে ৮০টিরও বেশি বড় ধরনের দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র দাবদাহ ও প্রবল বায়ুপ্রবাহের কারণে এসব দাবানল মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, গত ১৪ জুলাই শুরু হওয়া এই ডিক্সি ফায়ারে ইতোমধ্যে ইন্ডিয়ান ফলস কমিউনিটির এক ডজনেরও বেশি বসতি এবং অন্যান্য অবকাঠামো পুরোপুরি ধুলায় মিশে গেছে। দাবানলের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখন পর্যন্ত ঠিক অনুমান করা সম্ভব না হলেও প্লামাস এবং বাট কাউন্টির প্রায় ২০ ভাগ অর্থাৎ ৭৩ হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমি ভস্মীভূত হয়ে গেছে বলে স্থানীয় দমকল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর আগুন নেভাতে দমকল কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া লেক আলমানোরের পশ্চিম তীরে অবস্থানরত বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর গ্যাভিন নিউসম চারটি উত্তরাঞ্চলীয় কাউন্টিতে দাবানলের কারণে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে বিরূপ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আর এর কারণেই ঘন ঘন তাপদাহ ও দাবানলের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম এবিসি জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় সৃষ্ট বড় দাবানলটি ছোট একটি দাবানলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং সেটা গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে দমকল কর্মীদেরও দুর্যোগপূর্ণ ওই এলাকায় প্রবেশের সুযোগও সীমিত হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, দাবানলের কারণে ১০ হাজার বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। দমকল কর্মকর্তারা বলছেন, দাবানলের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এদিকে অরেগনের অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকার এক-চতুর্থাংশে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের অপারেশন্স বিভাগের প্রধান জন ফ্লানিগান গত রোববার মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আবহাওয়া সত্যিই আমাদের প্রতিকূলে। তীব্র গরম পড়বে, আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যাবে, আর অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বায়ুপ্রবাহ। আর, এই সবকিছু উত্তাপ দ্রুত বাড়তে রসদ জোগায়।’
পোর্টল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে ৩০০ মাইল (৪৮০ কিলোমিটার) এলাকা পুড়িয়ে দেয়া দাবানলে ধ্বংস হয়ে গেছে ১৬০টির বেশি ভবন। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও হাজার হাজার ভবন। ক্লামাথ জলপ্রপাত, রেডমন্ড শহরসহ বেশ কয়েকটি শহরের বাসিন্দাদের জন্য দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টারএজেন্সি ফায়ার সেন্টার বলছে—দাবানলের থাবায় এরই মধ্যে এ বছর সে দেশের ১২ লাখ একরের বেশি অঞ্চল তছনছ হয়ে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলো। সংস্থাটি ২০২১ সালে এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যে সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। শুধু ক্যালিফোর্নিয়াতেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর পাঁচগুণ বেশি এলাকা পুড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে দাবানলের মৌসুমে সচরাচর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের চেয়ে এ বছরের দাবানল বেশ বড় আকারে শুরু হয়েছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ড ভাঙা দাবদাহ।
চলতি সপ্তাহের আবহাওয়ার পূর্বাভাস আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় খুব একটা সহায়তার আভাস দিচ্ছে না। কারণ, এ সময় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি বেশি থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এবং এর সঙ্গে খরা তো রয়েছেই।
বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন—কয়েক বছরের খরার কারণে এ বছর উত্তর আমেরিকার দাবানল মৌসুম তীব্রতার দিক থেকে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন—জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে, যা দাবানল সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮২৮
আপনার মতামত জানানঃ