তালিবানরা যেনো আফগানিস্তানের বিষফোঁড়া। সুবিধা আদায়ের মিত্রতা আর এদের দখলাদারিত্বের টানাটানিতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে দেশটি। প্রায় দুই দশকের যুদ্ধ, ভয়বাহতা, ক্ষয়ক্ষতি, মৃত্যু, নিষ্ঠুরতার পর, সম্প্রতি বিদেশি সেনা দেশ থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত, অনেকটা তালিবানদের জামাই আদর করে মাছের বড় মাথাটার মতো আফগানিস্তানকে প্লেটে সাজিয়ে দেয়া। তবে এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের পাশে থাকার প্রত্যয় জানিয়েছে পাকিস্তান। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোকেও আহ্বান জানিয়েছে দেশটির পাশে থাকতে।
গৃহযুদ্ধ থামাতে চাইছে পাকিস্তান
আফগানিস্তানে দুই দশক পর মার্কিনসহ সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহরের পর দেশটিতে যাতে কোনো গৃহযুদ্ধ শুরু না হয়, এ জন্য প্রতিবেশীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সোমবার বেলুচিস্তানে এক জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এই আহ্বান জানিয়ে ইমরান খান বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে আফগানিস্তানের আসন্ন গৃহযুদ্ধ রুখতে।
সূত্র মতে, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইরানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গেও আলাপ করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে গোটা অঞ্চলে বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।
এ সময় আফগানদের বিপদে ফেলে মার্কিন বাহিনীর শটকে পড়ারও সমালোচনা করেছেন ইমরান খান।
খুঁটি শক্ত করছে তালিবানরা
এদিকে বিদেশি সেনাদের চলে যাওয়ার খবরে তালিবান আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। তারা ইতোমধ্যে ৪২১ জেলার মধ্যে ১৪০টির বেশি জেলা দখল করে নিয়েছে।
গত রোববার আফগানিস্তানের সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল অপারেশন বিভাগের কমান্ডার মেজর জেনারেল হিবাতুল্লাহ আলিযাই বলেন, তাদের এখন মূল লক্ষ্য তালিবানকে চেপে ধরা। তিনি জানান, আফগানিস্তানের বড় বড় শহর, মহাসড়ক এবং সীমান্ত শহর এলাকার দখল ঠেকাতে তারা শক্তিশালী বলয় তৈরি করেছেন।
আগ্রাসনের ২০ বছরের মাথায় আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে আগ্রাসন শুরু হলেও সহিংসতা বেড়েই চলছে দেশটিতে। গ্রামের পর গ্রাম দখলে নিচ্ছে তালিবান। এমন খবর প্রতিদিনই আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
তালিবান খুব দ্রুত আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নিতে পারে, এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় দুই দশকের আফগানিস্তান যুদ্ধ শেষের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনারা ইতোমধ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় বাগরাম বিমানঘাঁটি ত্যাগ করেছে।
অন্যদিকে তালিবানের ভয়ে আফগান বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্য প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে পালিয়ে গেছে। তাজিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তালিবান যোদ্ধারা সীমান্তের দিকে অগ্রসর হলে আফগানিস্তানের বদখশান প্রদেশের সেনাসদস্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে তাজিকিস্তানে প্রবেশ করেছে। মানবতা ও সুপ্রতিবেশীর নীতির আলোকে তাদের প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১০১৫
আপনার মতামত জানানঃ