সাত দিন ধরে দেশে প্রতিদিন করোনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর সাড়ে ৭৭ শতাংশই হয়েছে আইসিইউ সুবিধা কম থাকা সাত বিভাগে। আর সাড়ে ২২ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। তবুও হেলদোল নেই সরকারের, প্রশাসনের। হাসপাতালগুলোতে শয্যার কয়েকগুণ রোগী ভীড় করছে। আইসিইউ না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্বজন নিয়ে ছুটছে মানুষ। কোথাও আবার তালাবদ্ধ আইসিইউ। দক্ষ জনবল নেই। মহামারি করোনার মধ্যে এই যদি হয় আমাদের চিকিৎসা পরিকাঠামো, জিডিপির সংখ্যা দেখিয়ে উন্নয়নের ফিল্টারিংয়ে অপশাসন আর শোষণকে বৈধ করতে চাওয়া রাতের অন্ধকারে নিজের ভোটব্যাংক সামলানো এই আওয়ামী লীগ সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
৫২% হাসপাতালে আইসিইউ নেই
দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১০০ টি হাসপাতালের মধ্যে ৫২ টিতেই আইসিইউ সুবিধা নেই। এর মধ্যে ৩৫ টি হাসপাতালই জেলা সদর হাসপাতাল। মোট আইসিইউর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগে, ২৫ শতাংশ বাকি সাত বিভাগে।
জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা থাকলে মৃত্যু কমানো সম্ভব হতো বলে মনে করেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা।
গত বছরের ২ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রতিটি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপন এবং উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা বাড়াতে বলেন তিনি। এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার নির্দেশও দেন।
তবে ১৩ মাসেও জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট তৈরি হয়নি। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতি ও পরিকল্পনার ঘাটতিকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
করোনা বিধ্বস্ত রামেকে আইসিইউ মাত্র ২০ টি
প্রতিদিন বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তবুও ফাঁকা হচ্ছে না হাসপাতাল। আইসিইউর অপেক্ষায় লম্বা লাইন। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী আইসিইউর অপেক্ষায় থাকেন। করোনার প্রকোপে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিস্থিতি এমনই।
সূত্র মতে, গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ৪০৫ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৭৮ জন। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ২০ জন। অনেক রোগী শয্যা না পেয়ে বারন্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপতাল সূত্র মতে, সময়মতো আইসিইউর ব্যবস্থা করা গেলে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হতো। আইসিইউ না পাওয়ায় হাসপাতালে বেশি রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। আবার রোগীদের ফুসফুস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করায় তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর কথা বলছেন করোনা আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা। কারণ রাজশাহীতে আইসিইউ পাওয়া এখন দুঃসাধ্য।
চাহিদার তুলনায় যোগান একদমই সীমিত। রাজশাহী মেডিক্যালে করোনা সংক্রমণের আগে মোট ২০টি আইসিইউ ছিল। বর্তমানে ৩০টি আইসিইউ রয়েছে। এর মধ্যে করোনা রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ বরাদ্দ রয়েছে। এগুলোর বিপরীতে রোগী থাকেন ৫০-৬০ জন।
এজন্য আইসিইউ ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। বাকি ১০টি অন্যান্য রোগীদের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। করোনা রোগীদের ২০টি আইসিইউর সব কটিই রোগীতে পূর্ণ।
পরিকল্পনা আছে, অবকাঠামো নেই
করোনার এই দেড় বছরেও হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। শুধু পরিকল্পনা হয়েছে। নির্দেশ আছে, বাস্তবায়ন নেই। অর্থ বরাদ্দ, লুটপাট আছে জনসেবা নেই।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, যেসব রোগীর হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার প্রয়োজন পড়ে, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি মারা যায়। হাসপাতালে বর্তমানে রোগীর চাহিদার তুলনায় আইসিইউ সংখ্যা খুবই কম। তবে আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউ চাহিদা বাড়তে থাকায় হাসপাতালের আইসিইউ বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। কিন্তু বাড়ানোর জন্য অবকাঠামো নেই। সেটি তৈরি করে আইসিইউ বাড়ানো হবে।
এছাড়া সদর হাসপাতালেও আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়তো কাজ শুরু হবে। বর্তমানে হাসপাতালে আইসিইউ খালি হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ থাকে, তাকে দেয়া হয়।
জনবল নেই, তালা ঝুলছে আইসিইউতে
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সরঞ্জাম আছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ না দেয়ায় সাড়ে পাঁচ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। এই করোনার ভয়াবহ প্রকোপের মশ্যেও এখন এই ইউনিটটি তালাবদ্ধ। সূত্র মতে, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ রোগি ভর্তি থাকে।
শুধুমাত্র আইসিইউ না থাকার কারণেই সাধারণ ও করোনার রোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হচ্ছে। ওই হাসপাতাল পৌঁছানোর আগেই পথে অনেক রোগীর মৃত্যুও হচ্ছে। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউ সেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই কক্ষের ভেতর মোট চারটি শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে দুটি আইসিইউ ও দুটি এইচডিইউ শয্যা। কক্ষটিতে সকল যন্ত্রপাতিও রয়েছে। যন্ত্রপাতিগুলো প্রতিটি শয্যার সঙ্গে লাগানো, কিন্তু উদ্বোধনের পর একদিনও চালু হয়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২৮২০
আপনার মতামত জানানঃ