আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এমন উল্লেখ করে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-সহ দশটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল শনিবার মানবাধিকার বিষয়ক দশটি আন্তর্জাতিক সংস্থার একটি মোর্চার যৌথ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গ্রেফতারকৃত এবং সন্দেহভাজনদের উপর নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ করছে। শত শত মানুষ গুম বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।
কী উল্লেখ আছে বিবৃতিতে?
বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গ্রেফতারকৃতদের উপর চালানো অত্যাচারে যে সব উল্লেখ আছে, তা অমানবিক। এর মধ্যে রয়েছে লোহার রড, বেল্ট এবং লাঠি দিয়ে পেটানো কানে এবং যৌন অঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়া, মুখ আটকে পানি ঢালা (ওয়াটার বোর্ডিং), ছাদ থেকে ঝুলিয়ে পেটানো, পায়ে গুলি করা, কানের কাছে জোরে শব্দ করা বা গান বাজানো, পায়ের তালুর নীচে সূচালো বস্তু রাখা, মৃত্যু কার্যকরের নাটক সাজানো এবং নগ্ন করে রাখার মতো ঘটনা।
১০টি সংগঠনের মোর্চার এই বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯ সালে নির্যাতন-বিরোধী কনভেনশনের আওতায় হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশকে নিয়ে পর্যবেক্ষণের পর যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তার ফলোআপ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের সরকার।
সেসব সুপারিশের মধ্যে ছিল, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা যে, কোন ধরণের নির্যাতন সহ্য করা হবে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক করার পর সেটা গোপন রাখবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর মামলা করেছেন, যে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই সঙ্গে আটক থাকার সময় তিনি কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাও বর্ণনা করেছেন। আরেকজন লেখক মুশতাক আহমেদকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে সেই বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী, আন্তর্জাতিক গ্রুপ, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আটকাবস্থায় নির্যাতনের ব্যাপারে যেসব উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। আর তার জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র অস্বীকার আর মিথ্যা বক্তব্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের নেতারা সংস্কারের কথা বলে আসছেন। কিন্তু প্রতিটি সরকারই এই কতৃত্ববাদীতা আরও বাড়িয়েছে। অপব্যবহারের সংস্কৃতি তৈরি করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দায়মুক্তি দিয়ে আসছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের উচিৎ বাংলাদেশে গুম, নির্যাতন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে একটি রেজ্যুলেশন বা প্রস্তাব গ্রহণ করা।
সরকারের অস্বীকৃতি
তবে বরাবরের মতোই সরকার মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এই বিবৃতিকে ভিত্তিহীন এবং অসত্য বলে বর্ণনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব অভিযোগের কথা তারা বলছেন, এখানে ওই ধরনের কিছু করা হয় না। বাংলাদেশে কাউকে আটক করা হলে অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে আইনের নিয়ম অনুযায়ী, তার অধিকার, মানবাধিকারের সব কিছু অনুসরণ করেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে নির্যাতন যাতে না হয়, সেজন্য একটি আইনও রয়েছে। কেউ নির্যাতন করলে সেই আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। ফলে বাংলাদেশে এই ধরনের নির্যাতনের কোন সুযোগ নেই।
যেসব প্রতিষ্ঠান এই বিবৃতি দিয়েছে
এই বিবৃতি দেয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো হল এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ইলেওস জাস্টিস-মোনাস ইউনিভার্সিটি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার এবং রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ