সমাজে দুর্নীতি অর্থে আর্থিক অন্যায় বুঝালেও এর শাব্দিক অর্থ হলো খারাপ নীতি। খারাপ নীতি ঠেকানোর জাতীয় সংস্থা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন সম্প্রতি একটি খারাপ নীতির উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। খণ্ডকালীন চাকরি হওয়া সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ চাকরির মতোই সুযোগ সুবিধা দাবি করা হয়েছে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য। কিন্তু ওই সংস্থায় যারা পূর্ণকালীন চাকরি করেন অন্যান্য পদসমূহে, তাদের চাকরিকালীন বা অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধির কোনো আবেদন করা হয়নি।
জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চাকরি পেনশনযোগ্য করা এবং অবসর-পরবর্তী সময়ে সপরিবারে তাঁদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি। গত ১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। চিঠিতে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চাকরিকালীন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও ও অবসরকালীন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আর্জি জানিয়েছেন।
তবে এমন চিঠির বিরোধিতা উঠছে সংস্থার অভ্যন্তরেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আইনি সেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘উনারা তো আগে একটা রেগুলার চাকরি করেছেন। সেখান থেকে সব সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। অবসরের পরও সব সুবিধা পাচ্ছেন। এখন এখানে নিয়োগ পেয়েছেন সম্মানের খাতিরে। এখানে তো তাদের বেতনই নেয়া উচিত না। তারা আবার বাড়তি টাকা দাবি করছেন। এটা অবশ্যই এক ধরণের নীতিহীনতা।’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা দুর্নিতি দমন কমিশন। এই প্রতিষ্ঠানের নৈতিক ভূমিকাটাই সবচেয়ে বড়। আগে অভিযোগ ছিল সরকারের চাপের কাছে নতিশিকারের। এখন অভিযোগ উঠছে সুযোগ সুবিধা হাতানোর। এটা ঠিক হয়নি। বড়কর্তারা খুব খারাপ উদাহরণ তৈরি করলেন।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দুদকের চেয়ারম্যানের বেতন, আর্থিক সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং কমিশনারদের বেতন, আর্থিক সুবিধাদি ও পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের সমরূপ নির্ধারণ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ধারা ৬ (৩) অনুযায়ী কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চাকরির মেয়াদ তাঁদের যোগদানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদ শেষে তাদের পুনর্নিয়োগ লাভের কোনো সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে আইনের ধারা ৯ এর ভাষ্য অনুযায়ী কর্মাবসানের পর তাঁরা প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হন না।
চিঠিতে আরো বলা হয়, দ্য সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (রিম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেন্স) অধ্যাদেশ, ১৯৭৮ এর ধারা ৫ অনুযায়ী অবসর-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা সপরিবারে স্পেশাল মেডিক্যাল অ্যাটেনডেন্স রুলস ১৯৫০ মোতাবেক চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া দ্য সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেন্স) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ এর ধারা ১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। ওই আইনের ১৩ (ক) ধারা অনুযায়ী একজন বিচারকের চাকরি ন্যূনতম পাঁচ বছর হলে তা পেনশনযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
এ সময়সীমা দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চাকরির মেয়াদের সমান। বর্ধিত অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবসর জীবন নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য করার জন্য ওই অধ্যাদেশগুলো অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যৌক্তিক বলে কমিশন মনে করে। এ ছাড়া চিঠিতে দুদক সচিব মন্ত্রিপরিষদসচিবকে দ্য সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (রিম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেন্স) অধ্যাদেশ, ১৯৭৮ এবং দ্য সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেন্স) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ অনুযায়ী দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চাকরি পেনশনযোগ্য করতে এবং অবসর-পরবর্তী সময়ে সপরিবারে তাঁদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।
তবে সংস্থাটির নিম্নপদস্থ কর্মীরা এ চিঠির ব্যাপারে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাদের বক্তব্য, এটাও এক ধরণের দুর্নীতি। নাম গোপনের শর্তে একজন কর্মচারী বলেন, উনারা মাত্র কয়েক বছরের জন্য এখানে আসেন। এখন নিজেদের সুবিধার জন্য কাজ করছেন তারা। আমরা যারা এখানে বছরের পর বছর কাজ করছি, তাদের কথা তারা ভাবলেন না। এই প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, তাদের কথা ভাবার কেউ নেই।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ