কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের পাশাপাশি এশিয়ার ১৮টি দেশকে নতুন করে ১ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের এই টিকা দেওয়ার ঘোষণায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, টিকা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বাগে আনতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউস বিশ্বজুড়ে করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নিজের মজুত থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় এবং সরাসরি সাড়ে পাঁচ কোটি টিকা বণ্টনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ওই পরিকল্পনায় বিশ্বের কোন দেশে কত টিকা পাঠানো হবে, সে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষিত আট কোটি টিকা অনুদান দেওয়ার অংশ হিসেবেই এই ঘোষণা এসেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাইজ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষিত ৮ কোটি ডোজের আড়াই কোটি ডোজ আগেই অনুদান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার বাকি সাড়ে ৫ কোটি করোনা টিকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা এলো।
জানা যায়, কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন অনুদান কার্যক্রমের আওতায় এসব টিকা সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কিছু রাষ্ট্রের জন্য ১ কোটি ৬০ লাখ ডোজ সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
হোয়াইট হাউজ জানায়, এই সাড়ে ৫ কোটি করোনা টিকার ৪ কোটি ১ লাখ ডোজ কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন সরবরাহ কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হবে। যার মধ্যে ১ কোটি ৪ লাখ ডোজ যাবে দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। এছাড়া ১ কোটি ৬ লাখ ডোজ পাবে এশিয়ার দেশগুলো। যেখানে বাংলাদেশসহ আরও আছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, ভুটান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মাল্যেশিয়া, লাওস, তাইওয়ান, কম্বোডিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, তারা যত দ্রুত সম্ভব এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। তবে এসব টিকা সরবরাহ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছে মার্কিন প্রশাসন। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে টিকাসংক্রান্ত সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ তথ্যগুলো পরস্পর ভাগাভাগি করতে হবে। উপযুক্ত তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ভাষাগত জটিলতার মতো বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, কেবল টিকা পাঠিয়ে দিলেই হবে না, এর ব্যবহারবিধি ও সতর্কতামূলক বিষয়গুলো জানাতে হবে, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যথাযথভাবে সংরক্ষণের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। কখনও কখনও ভাষার পার্থক্যও একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায়, যুক্তরাষ্ট্র তখন কেবল বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিনই মজুদ করেনি, কাঁচামাল ও সরঞ্জামেরও বড় মজুদ গড়েছে।
সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ ছিল, তাদের হাতে থাকা অব্যবহৃত টিকা যেন তারা সেসব দেশকে দেয়, যারা এখনও সেভাবে টিকার ব্যবস্থা করতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্র সে দেশের মজুত থেকে যে টিকা সরবরাহ করবে, তা হবে ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের উৎপাদিত। তবে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) অনুমোদন পেলে এবং সবুজসংকেত পেলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকাও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বাগে আনতে আগেই ভারত-চীন ভ্যাকসিন রাজনীতির দৌড়ে আছে। এর মাঝে পাকিস্তান কিছুটা উঁকি দিলেও পরে মাথা তারা সরিয়ে নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন জোটের সাথে মদদ দিয়ে চীনকে ঠেকাতে নানা ফন্দি ফিকির শুরু করেছে। তার মধ্যে জি-৭ ও ন্যাটো জোট উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোডের’ পাল্টা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলারও চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থ হুমকির মুখে পড়াতেই মূলত নতুন এই খেলা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভ্যাকসিন রাজনীতি। যে দেশটি নিজের জনগণকে টিকার আওতায় আনতে বিশ্বব্যাপী স্বার্থপরতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, কেবল বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিনই মজুদ করেনি, কাঁচামাল ও সরঞ্জামেরও বড় মজুদ গড়েছে, সেদেশের টিকা দেওয়ার ঘোষণায় যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এছাড়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সাথেও সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের নিরপত্তা ইস্যুগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করা হবে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। শুধু ভাবা নয়, কাজও শুরু করে দিয়েছে। তারই অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই টিকা কর্মসূচী বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ