মানবাধিকার সংস্থাগুলো আগে থেকেই বলে আসছিল তীব্র খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়তে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। মহামারি করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তর কোরিয়ার কৃষিক্ষেত্রে এবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশটির খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।
বুধবার (১৬ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগের কথা জানান তিনি।খবর রয়টার্স।
কিম জং উন বলেন, করোনাভাইরাস ও টাইফুনের কারণে উত্তর কোরিয়ার কৃষিক্ষেত্রে এবার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কিম বলেন, এ বছর দেশের অর্থনীতির উন্নতি হলেও খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমি সবাইকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) দেশটির ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে আলোচ্য বিষয় ছিল ‘অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান ও গৃহীত পদক্ষেপের অগ্রগতি পর্যালোচনা’।
এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কিম জং উন। ওই বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটি নতুন পঞ্চবার্ষিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অর্জনে বেশ কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বৈঠকে কিম বলেন, ‘আমরা ফেব্রুয়ারিতে কিছু পরিকল্পনা করেছিলাম। সেগুলো বাস্তবায়নে বছরের প্রথমার্ধে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নতি হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এবার শিল্প উৎপাদনও ২৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে দলের প্রচেষ্টায় কিছু ধারাবাহিক বিচ্যুতি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’
কিম বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমানো এবং গত বছরের সঙ্কট থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বছর আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর হতে হবে।’
এর আগে এপ্রিলের শুরুতে দেশ ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছিলেন কিম। বেশ কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলেও ওই সময় দেশবাসীকে জানান তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত বন্ধ রেখেছে উত্তর কোরিয়া। ফলে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য এ মুহূর্তে বন্ধ। এ ছাড়া পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনার কারণে আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ উত্তর কোরিয়ায়।
কোরিয়ার জনগণকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে— বেশ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবর প্রকাশ করে।
চীনের সঙ্গে সীমানা বন্ধ থাকায় সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে চোরাচালানের ওপর নির্ভরশীল উত্তর কোরিয়ার বড় একটি জনগোষ্ঠী। দেশটির প্রধান খাদ্য ভুট্টার মূল্য কেজিতে এতো বেড়েছে যে, তা অনেকের এক মাসের আয়েরও বেশি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক লিনা ইয়ুন বলেন, ‘দুই মাস ধরে চীন থেকে প্রায় কোনো খাবারই উত্তর কোরিয়ায় যায়নি। সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকজন এরই মধ্যে অনাহারে মারা গেছে। ভিখারীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে ।’
তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ ভিক্ষা করছে, সীমান্ত এলাকায় অনেকেই মারা গেছে। আর কোনও খাবার নেই, সাবান নেই, টুথপেস্ট কিংবা ব্যাটারিও পাওয়া যাচ্ছে না।‘
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টার তোমাস ওজিয়া কুইন্তানা সতর্ক করে বলেন, ‘মারাত্মক খাদ্য সংকটের কারণে দেশটিতে ইতোমধ্যেই অপুষ্টি ও ক্ষুধা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। অনাহারে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধদের অনেকে ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে।’
১৯৯০ সালে উত্তর কোরিয়ায় মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটি খাদ্য ঘাটতির মুখে পড়ে। খাদ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, বন্যা ও খরা পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।
খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারায় ৩০ লাখের মতো মানুষ। দুর্ভিক্ষের সময় কোরিয়াবাসীর ওই সময়ের সংগ্রামকে ‘আরডিউয়েস মার্চ’ বা ‘কষ্টসাধ্য যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ