আফগানিস্তানে চার পোলিও কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জনগণকে যাতে পোলিও টিকা দেওয়া না যায় সে জন্য পোলিও কর্মীদেরকে বাছাই করে হত্যা করেছে তালিবান জঙ্গিরা। আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওসমান তাহেরি গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
নানগড় প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র ফরিদ খান জানিয়েছেন, পরিকল্পিত হামলার অংশ হিসেবে দুই ঘণ্টার মধ্যে তিনটি ভিন্ন এলাকায় তাদের হত্যা করা হয়েছে।
ফরিদ খান বলেন, ‘তালিবান জঙ্গিরা এই কাজ করেছে। জনগণকে যাতে পোলিও টিকা দেওয়া না যায়, সে জন্য তারা পোলিও কর্মীদেরকে বাছাই করে হত্যা করছে।’ তবে তালেবানরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত তিন মাসের মধ্যে দেশটির উত্তরাঞ্চলে পোলিও কর্মীদের ওপর এটা দ্বিতীয় হামলা।
মঙ্গলবারের আক্রমণে খোগিয়ানী জেলায় দুই জন পোলিও কর্মী মারা গেছেন এবং এক জন আহত হয়েছেন। ওদিকে সুরখরোডে নিহত হয়েছেন দুজন। অন্য হামলায় আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী জালালাবাদে তিন জন আহত হয়েছেন।
এই ঘটনায় নানগড় প্রদেশে এখন টিকাদান বন্ধ রয়েছে।
বিশ্বের প্রতিটি দেশে পোলিও নির্মূল করা গেলেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এখনও তা সফল হয়নি। দুটি দেশেই ভ্যাকসিনের বিষয়ে প্রবল অবিশ্বাস রয়েছে। কট্টর মৌলবাদীরা জনগণকে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছেন।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে সামরিক উপস্থিতি সরিয়ে নিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ৯/১১ হামলার ২০তম বার্ষিকীতে এই সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ন্যাটো বাহিনীও দেশটি ছেড়ে যাবে। তবে একমাত্র বিদেশি বাহিনী হিসেবে আফগানিস্তানে থেকে যেতে চায় তুরস্ক। এরইমধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে আঙ্কারা।
তুরস্কের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মে মাসে ন্যাটো জোটের এক বৈঠকে আঙ্কারা এ বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে। ব্রাসেলসে ন্যাটো সম্মেলনে যোগদানের প্রাক্কালে রবিবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানও এ বিষয়ে জোরালো ভাষায় কথা বলেছেন। এ নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আঙ্কারার আলাপ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এরদোয়ান বলেন, আফগানিস্তান ত্যাগের পর তুরস্ককে হিসাব করবে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা রক্ষায় তুরস্কই হবে ‘একমাত্র নির্ভরযোগ্য’ দেশ।
তুরস্ক শুধু আফগানিস্তানে অবস্থান করাই নয়; বরং কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও পরিচালনার দায়িত্বও নিতে চায় তারা। আঙ্কারার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
একজন তুর্কি কর্মকর্তা জানান, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সম্ভাব্য সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। ওয়াশিংটন কিছু বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তার মতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর তুরস্কের পক্ষ থেকে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনা করতে তুরস্ক যে প্রস্তাব দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র সুহেল শাহীন বলেছেন, ২০২০ সালের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে তুরস্কের উচিত নিজেদের সেনাদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তালিবানের মতামত জানতে চাইলে দোহাভিত্তিক এক মুখপাত্র জানান, ২০ বছর ধরে তুরস্ক ন্যাটোর অংশ ছিল। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী তুর্কি সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়তে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ