সিলেটে শনিবার (২৯ মে) সকাল থেকে বেলা দুটার মধ্যে পাঁচবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এসব ভূকম্পনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের ভূকম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১। এছাড়া ৪, ৩ ও ২ দশমিক ৮ মাত্রাও রয়েছে। এদিকে কোন কোনটি এতো মৃদু যে সব স্টেশনে মাত্রা মাপাও যায়নি।
ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম বলছেন, ‘ভূমিকম্পের প্রিশক ও আফটারশক থাকে। অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট কম্পন হয়। আবার বড় ভূমিকম্প হলে তারপর ছোট ছোট কম্পন হয়। যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে। তিনি আরও বলেন, সিলেটে এমন আর কখনো হয়নি। যদিও সিলেট অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পাঁচবার কম্পন অনুভূত হয়েছে। এরমধ্যে সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে প্রথমে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিলেটে। এরপর সকাল ১০টা ৫২, ১১টা ৩০ মিনিট, ১১ টা ৩৪ মিনিট ও সর্বশেষ ১টা ৫৮ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। এসব ভূকম্পনের মধ্যে প্রথমবার ভূমিকম্প ৫০ সেকেন্ড, দ্বিতীয় বার ৫৩ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল আগে থেকেই ঝুঁকিতে আছে। এই অঞ্চলে অতীতে তিনবার বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস আছে। এর মধ্যে একটি হয়েছিল ১৮৬৯ সালে সিলেট অঞ্চলের কাছার এলাকায়। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬।
আরেকটি ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে। আরেকটি ১৯২৩ সালে দুর্গাপুরে। এগুলোও বড় ধরনের ভূমিকম্প ছিল। এর কারণে সেখানে বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়, যা এখনো রয়েছে। ফাটলগুলো সুপ্ত অবস্থায় আছে। ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ায় সেটি নাড়াচাড়া দিতে পারে। ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সিলেট একদিকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ‘ডাউকি ফল্ট’ থেকে মাত্র ২শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অন্যদিকে ‘শাহবাজপুর ফল্ট’ও কাছাকাছি। যে কারণে সিলেটের জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি খুব বেশি। ফলে এখানে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে এ আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
ভূমিকম্পের প্রবণতা নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা করছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তার গবেষণা মডেল বলছে ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি জানান, বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। তবে আজকের প্রথম ভূমিকম্পটি ভালোভাবে বোঝা গেলেও পরেরগুলো ছিলো আরও মৃদু কম্পন অর্থাৎ খুবই হালকা ধরণের।
কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি অঞ্চলে যেভাবে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে বহুকাল ধরে তাতে আট মাত্রার পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে যদি একবারে হয়। হলে একবারেও হতে পারে আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে বা দফায় দফায়ও হতে পারে। কিন্তু কোন মাত্রার হবে এটা আগে থেকে অনুধাবন সম্ভব না।
হুমায়ুন আখতার আরো বলেন, বারবার যেভাবে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বড় ধরণের কম্পনও অনুভূত হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ