মুসলিম বিশ্বে সর্বপ্রথম তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন মুস্তফা কামাল পাশা আতাতুর্ক। ১৯২৮ সালে দেশটির শাসনতন্ত্রে “রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম” সরানোর সংশোধনী বিল চালু করে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার ক্ষমতার মেয়াদকাল ছিল ১৯২৩-১৯৩৮ পর্যন্ত।উসমানী খেলাফতের শেষের দিকের সুলতানদের অযোগ্যতা-অদক্ষতা ও অপরিণামদর্শিতার কারণে মুস্তফা কামাল পাশা আতাতুর্ক তার শাসন আমলে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন।
তবে তুরস্কের ইসলামিক চিন্তাবিদরা ও ধর্মপ্রাণ মানুষেরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, সুকৌশলে সে দেশের জনগণকে সেক্যুলারিজমের প্রভাব থেকে মুক্ত করতে বরাবরই চেষ্টা করে আসছেন। তুরস্কের বর্তমান সরকারের নীতিতে সেই প্রচেষ্টার সুফল দেখা যায়। ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সেক্যুলারিজমের প্রতীক ‘তাকসিম স্কয়ারে’ মসজিদ উদ্বোধন করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, যাকে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন অনেকে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার উদ্বোধন করা মসজিদটিতে নামাজ পড়তে হাজারও মুসল্লি জড়ো হয়েছিলেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সেক্যুলারিজমের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় তাকসিম স্কয়ারকে। সেখানে মসজিদ নির্মাণে পঞ্চাশের দশক থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছিল বিভিন্ন সরকার। শুক্রবার সে আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পেল।
মসজিদটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যার সাথেই আছে খোলা চত্বর যেটিকে ঐতিহাসিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতীক মনে করা হয়।
মূলত এটি তুর্কি প্রজাতন্ত্র এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের একটি স্মারক হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই মসজিদের ভেতর চার হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদ উদ্বোধনের সময় এরদোয়ান বলেন, এই এলাকায় কোনো মসজিদ ছিল না। মুসল্লিরা মাটিতে পত্রিকা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতেন।
শুক্রবার মসজিদটির উদ্বোধন করে এরদোয়ান বলেন, তাকসিম মসজিদ এখন ইস্তাম্বুলের স্মারকগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। আল্লাহর ইচ্ছায় এটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকবে।
মসজিদের উদ্বোধনের সময় জুমার নামাজ পড়তে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতিবাদ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে মসজিদ নির্মাণ করতে পারা একটি বিজয়। কোন কিছুই এ উদ্যোগকে বন্ধ করতে পারবে না।
আবুজের কচ নামে একজন এএফপিকে বলেন, এখানে মানুষের তুলনায় মসজিদ কম। যারা এটি বানিয়েছে আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন।
১৯৯০–এর দশকে ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। সে সময় তিনি তাকসিম স্কয়ারে মসজিদ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন।
১৯৫০ সালে ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ারে একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্ক পরিচিত থাকলেও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘকাল নির্মাণকাজ থেমে থাকে।
অবশেষে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে চার বছরে তা শেষ হয়।
ইস্তাম্বুলের ব্যস্ততম নগরী তাকসিম স্কয়ারের ২৬ হাজার ৭১৬ স্কয়ার ফুট স্থানে মসজিদটি নির্মিত। এতে চার হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। দুই জন তুর্কি নকশাকার তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদের নকশা করেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সম্মেলন পরিচালনার জন্য মসজিদের ভেতর একটি সম্মেলন কক্ষ ও প্রদর্শনী হলও আছে। মসজিদের সাজ-সজ্জার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন। বিখ্যাত তুর্কি ক্যালিগ্রাফার দাভুত বেকতা ও অ্যাডেম তুরানের তৈরি কোরআনের প্ল্যাটও রয়েছে এখানে।
১৯৫২ সালে তাকসিম স্কয়ারে মসজিদ নির্মাণ করতে তাকসমি মসজিদ বিল্ডিং এন্ড সাসটিনেন্স এসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৮০ সালের অভ্যুত্থানের পর তা এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। জনগনের আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ করে না বলে বার বার এর কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বোর্ড অব প্রিজারভেশন অব কালচারাল মনুমেন্টসের কাছে মসজিদের পরিকল্পনাটি পুনরায় গৃহীত হয়।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তুরস্কের ধর্ম নিরপেক্ষভিত্তি থেকে সরে আসার জন্য এরদোয়ানের সমালোচনা করেন অনেকে। তাকসিম স্কয়ারের গাজি পার্কে ২০১৩ সালে যখন এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো তখন সেখানে এর প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিলো।
এমনকি বিশ্বের নানা জায়গায় ওই বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়েও নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরদোগানের ইচ্ছাই সফলতা পেল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ