বাংলাদেশে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন চলছে, যার শিকার হচ্ছে হিন্দুরা, এমন অভিযোগে কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাস ঘেরাও করল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শাখা সংগঠন বজরং দল। ১১ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করে রীতিমতো গেরিলা কায়দায় পার্কসার্কাসে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানাল কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি। বজরং দলের দাবি, এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা তাঁদের ৬০০ জন কর্মীকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও পুলিশের দাবি, বজরং দলের মাত্র ৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তাঁদের জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় কলকাতার বিড়লা তারামন্ডলের সামনে থেকে মিছিল করে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে পার্কসার্কাসে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন ঘেরাও এবং স্মারকলিপি দেওয়ার ডাক দেয়। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বজরং দলের সদস্যরা বিড়লা তারামন্ডলের সামনে সকাল ১০টা থেকে জমায়েত হতে শুরু করে। অভিযোগ, এই সময় পুলিশ বজরং দলের সদস্য গ্রেফতার করা শুরু করে। স্ট্র্যটেজি বদলে ফেলে বজরং দলের নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এক্সাইড মোড় হয়ে মিন্ট পার্কের দিকে সরে যায়। মিন্ট পার্ক ক্রসিং পের হওয়ার পরই আচমকা তাঁরা ব্যানার পোস্টার বার করে স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করে দেয় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের দিকে। পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আশ-পাশের রাস্তা থেকে অসংখ্য কর্মীরা বের হয়ে এসে মিছিলে যোগ দেয়।
বজরং কর্মীরা বিশাল মিছিল মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরনীর দিকে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের ঠিক আগেই পুলিশ গার্ড রেল দিয়ে ত্রীস্তরীয় ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে চলে ব্যাপক স্লোগান। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা। এরপরই পুলিশ লাঠি উচিয়ে তেড়ে যায় বজরং দলের কর্মীদের দিকে। এ সময় পুলিশের বজরং দলের নেতা সুমন কর্মকার সহ বেশ কিছু কর্মীকে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল থেকে সরে গিয়ে বিক্ষোভকারীরা মিন্ট পার্কের আগের ক্রশিংয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। এখানে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। এরপর দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত ভাবে রাস্তার ওপর বিক্ষোভ চলতে থাকে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে লালবাজার, হেস্টিংস, বেনিয়াপুকুর থানায় নিয়ে যায়।
বজরং দলের দক্ষিণবঙ্গের সংযোজক সমীর নস্কর অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ বিনা প্ররোচনায় আমাদের কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ঘেরাও এবং স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়ে ছিলাম। আমি বাংলাদেশ দূতাবাসে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের স্মারকলিপি নেওয়া হয়নি। উলটে আমি দূতবাস থেকে বের হওয়ার পর আমায় পুলিশ গ্রেফতার করে।’
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্র সম্পাদক অমিয় সরকার বলেন,‘ গত ৬ মাসে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। জেহাদি-মৌলবাদীরা তান্ডব চালাচ্ছে সেদেশের সংখ্যালঘু মানুষদের ওপর। বিষয়টি নিয়ে ভারতের মতো সমগ্র বিশ্বের হিন্দুরা আতঙ্কিত। এই বাংলাদেশ আমরা চাই না। তাই জেহাদি শক্তিকে হুশিঁয়ারি দিতে এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। হিন্দু নির্যাতন যদি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’
পুলিশের সমলোচনা করে অমিয় সরকার বলেন, ‘ফ্রান্সের ঘটনায় যখন এখানে মুসলিম সংগঠন গুলি প্রতিবাদে নেমেছিল তখন পুলিশ লাঠি চার্য করেনি। গ্রেফতার করেনি। হিন্দুদের নির্যাতন নিয়ে বলতে গিয়ে এই আচরণ করা হল কেন? বাংলাদেশ দূতাবাস আমাদের স্মারকলিপি নেওয়ার সময় দিয়েছিল। তার নথী আমাদেরও কাছে আছে। এখানে প্রশাসনের অসুবিধা হলো কেন? পশ্চিমবঙ্গে খুব বাঙালি বাঙালি বলে প্রচার করছে মমতা সরকার। বাংলাদেশের বাঙালিদের কথা বললেই আপত্তি! এতো দ্বিমুখী নীতি।’
সূত্র : যুগশঙ্খ
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ