বিপ্লব পাল
“আমি তোমাকে সত্য বলছি সন্দীপ, দেশকে দেবতা বলিয়ে যখন তোমরা অন্যায়কে কর্তব্য, অধর্মকে পুণ্য ব’লে চালাতে চাও তখন আমার হৃদয়ে লাগে বলেই আমি স্থির থাকতে পারি নে। আমি যদি নিজের স্বার্থসাধনের জন্যে চুরি করি তা হলে নিজের প্রতি আমার যে সত্য প্রেম তারই কি মূলে ঘা দিই নে? চুরি করতে পারি নে যে তাই। সে কি বুদ্ধি আছে ব’লে না নিজের প্রতি শ্রদ্ধা আছে ব’লে?” ( নিখিলেশ সন্দীপের প্রতি -ঘরে বাইরে)
ভারত পাঁচহাজার বছরের সভ্যতা। সভ্য শব্দটি ভারী। তাকে বহন করতে শক্ত সামর্থ্য পিঠ দরকার। আর সেই চওড়া পিঠের নেতা না পেলে, সভ্যতার লাশ ভাসবে গঙ্গায়।
গত এক সপ্তাহে বিদেশের শ্রেষ্ট, সর্বাধিক পঠিত নিউজমিডিয়া মোদি নিয়ে কি বলছে সেটা শুনে নিই প্রথমে !
The Economist ( Best News Media in Economics) – As second wave devastates India Narendra Modi vanishes.
Bloomberg – Rural India is starting to turn on Modi
CNN – Modi presses ahead with $1.8B Parliament renovation even as Covid-19 ravages India
Washington Post – Modi’s pandemic choice, Protect his image or protect India. He choose himself.
International Policy Digest – Covid in India, A tragedy with its root in Narendra Modi’s leadership style
NPR – Covid in India- sorrows turn to anger against Prime Minister
এক ভ্রান্ত দেশভক্তির আদর্শ, যে ব্যপারে গুরুদেব নিখিলেশ অবতারে প্রায় একশো বছর আগে আমাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন-সেই অন্ধদের দেশপ্রতিমা পুজো কতটা ডোবাতে পারে, তার তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অবস্থা এতটাই নীচে-দিল্লীতে কিছু লোক বেনামে পোষ্টার মেরেছিল- মোদি, তুমি আমাদের ভ্যাক্সিন চুরি করে বিদেশে পাঠিয়েছ কেন! শুধু সেই জন্য ১২ জন অটোরিক্সোয়ালাকে ধরেছে পুলিশ! ব্যাপারটা ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। দিল্লীতে অক্সিজেনের আকাল, মরা পোড়াবার জায়গা নেই, বেড নেই, কালোবাজারী-সেসব ছেড়ে পুলিশ পোষ্টারওয়ালার পেছনে!! কেন? মোদি নিশ্চয় নিজেকে খোরাক করার জন্য এই কাজ করতে বলবে না। কোন পুলিশ অফিসারই অতিউৎসাহে এই কাজ করতে গেছে-নইলে সেও ভয়ে আছে, তার চাকরি থাকবে না! অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাবার জন্য তার আশেপাশে একটা এফিশিয়েন্ট এডমিনিস্ট্রেটিভ সিস্টেমের বদলে টোটাল কাল্ট তৈরী করেছেন। যা স্টালিন হিটলার এদের আশেপাশে দেখা যেত। অধুনা শুধু কিম জঙের পাশে দেখা যায়। দেখা যাচ্ছে এখন মোদির আশে পাশে কোন পলিশিমেকার, আমলা নেই। আছে জো হুকুম সরীসৃপের কিলবিল।
পলিসি নেই পলিটিক্স আছে। ভ্যাক্সিন নেই, ভ্যানিটি আছে। বেড নেই, বাতেলা আছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠিক চিনেছিলেন মোদিকে, কিন্ত সেদিন মোদির বকৃত্তায় বিমলা ছিল মোহাচ্ছন্ন –
” সেদিন সন্দীপবাবু যখন বক্তৃতা দিতে লাগলেন আর এই বৃহৎ সভার হৃদয় দুলে দুলে ফুলে ফুলে উঠে কূল ছাপিয়ে ভেসে যাবার জো হল তখন তাঁর সে এক আশ্চর্য মূর্তি দেখলুম। বিশেষত এক সময় সূর্য ক্রমে নেমে এসে ছাদের নীচে দিয়ে তাঁর মুখের উপর যখন হঠাৎ রৌদ্র ছড়িয়ে দিলে তখন মনে হল, তিনি যে অমর-লোকের মানুষ এই কথাটা দেবতা সেদিন সমস্ত নরনারীর সামনে প্রকাশ করে দিলেন। বক্তৃতার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক কথায় যেন ঝড়ের দমকা হাওয়া। সাহসের অন্ত নেই। আমার চোখের সামনে যেটুকু চিকের আড়াল ছিল সে আমি সইতে পারছিলুম না।”
নিখিলেশ জানত, ঠিকই চিনত মোদিকে -তাই সে সন্দীপকে বলে
“বড়ো বড়ো ডাকাত-সভ্যতারও জবাবদিহির দিন কখন আসে তা বাইরে থেকে দেখা যায় না। কিন্তু, একটা জিনিস কি দেখতে পাচ্ছ না– ওদের পলিটিক্সের ঝুলি-ভরা মিথ্যাকথা, প্রবঞ্চনা, বিশ্বাসঘাতকতা, গুপ্তচরবৃত্তি, প্রেস্টিজ্রক্ষার লোভে ন্যায় ও সত্যকে বলিদান, এই যে-সব পাপের বোঝা নিয়ে চলেছে এর ভার কি কম? আর, এ কি প্রতিদিন ওদের সভ্যতার বুকের রক্ত শুষে খাচ্ছে না? দেশের উপরেও যারা ধর্মকে মানছে না, আমি বলছি, তারা দেশকেও মানছে না।“
নিখিলেশ সেখানেই থামেনি- দ্বিখন্ডিত করেছে দেশভক্তির পিশাচকে-
“আমি অনেক দিন থেকেই লক্ষ্য করেছি, সন্দীপের প্রকৃতির মধ্যে একটা লালসার স্থূলতা আছে। তার সেই মাংসবহুল আসক্তিই তাকে ধর্ম সম্বন্ধে মোহ রচনা করায় এবং দেশের কাজে দৌরাত্ম্যের দিকে তাড়না করে। তার প্রকৃতি স্থূল অথচ বুদ্ধি তীক্ষ্ণ বলেই সে আপনার প্রবৃত্তিকে বড়ো নাম দিয়ে সাজিয়ে তোলে। ভোগের তৃপ্তির মতোই বিদ্বেষের আশু চরিতার্থতা তার পক্ষে উগ্ররূপে দরকারি।”
দুর্ভাগ্য বিমলা মোদিকে চিনতে পারে নি। যখন চিনল, তখন নিজের ঘরে, নিজের গড়ে দাঙ্গার আগুন লাগিয়ে কেটে পরেছে সন্দীপ। যে দাঙ্গার আগুনে সংসার ছারখার হয়ে যায় বিমলার।
যতবার সিএন এনে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু- পার্কে চিতার আগুন দেখছি-শুধুই দুঃস্বপ্ন দেখি-নিখিলেশকে কেউ পোড়াচ্ছে। স্বজন হারার কান্নায় বিমলার মুখ ভেসে ওঠে।
নিখিলেশকে খুঁজছি- সে নিখোজ। চিতায় জ্বলছে।
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ