দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা ও তাকে নিপীড়ণের প্রতিবাদে অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা স্বেচ্ছায় কারাবরণের আবেদন নিয়ে শাহবাগ থানায় অবস্থান করছেন।
আজ মঙ্গলবার (১৮ মে) সন্ধ্যা ৬টায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা শাহবাগ থানায় যান।
তারা এ সময় রোজিনা ইসলামের সঙ্গে জেলে যেতে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুনুর রশীদের কাছে আবেদন করেন।
সাংবাদিকেরা বলছেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই একই অভিযোগ যেকোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনা যায়। সে কারণে রোজিনা ইসলামকে কথিত যে দোষে দোষী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, এমন অসংখ্য অভিযোগ থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও আনা যায়। কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা জনস্বার্থে এমন গোপন নথির মাধ্যমে দুর্নীতি উন্মোচন করে থাকেন। তাই তারা স্বেচ্ছায় কারাবরণের আবেদন নিয়ে থানায় হাজির হয়েছেন।
কারাবরণের আবেদন নিয়ে হাজির হওয়া সাংবাদিকেরা হলেন, বদরুদ্দোজা বাবু, মিলটন আনোয়ার, মহিম মিজান, পারভেজ রেজা, মুনজুরুল করিম, আব্দুল্লাহ তুহিন, খান মুহাম্মদ রুমেল, অপূর্ব আলাউদ্দীন, আবদুল্লাহ আল ইমরান, নয়ন আদিত্য, মুক্তাদির রশীদ রোমিও, এস এম নূরুজ্জামান, শাহনাজ শারমিন, কাওসার সোহেলী।
গতকাল সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে সচিবালয় থেকে তাকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় তার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ আনা হয়। মঙ্গলবার ওই মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাবিধি অনুযায়ী রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসা দেওয়ারও আদেশ দেন আদালত। পরে রোজিনাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়। আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মে) তার জামিন আবেদনের শুনানি হবে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানি মামলাসহ নানা আইন অনুসন্ধানী সাংবাধিকতার সামনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের মধ্যে প্রবল ভীতি তৈরি করেছে৷ প্রতিটি রিপোর্ট লেখার আগে তারা হিসাব করছেন ডিজিটাল আইন নিয়ে৷ মানহানি মামলার অপপ্রয়োগ হচ্ছে৷ একটি ঘটনায় বহু মামলা হচ্ছে, যা সংবিধানের বরখেলাপ৷ কিন্তু কে দেখবে এসব? দুঃখজনক হলেও সত্য সাংবাদিকরা আইনি সুরক্ষা তো দূরের কথা বরং আইনি বাধার মুখেই পড়ছেন৷
তারা মনে করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের যে মূল সমস্যা, সেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে না৷ যেমন, টাকা পাচার, বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের যে তালিকা বিভিন্নসময় প্রকাশ হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির খবর জানতে হয় বিদেশী গণমাধ্যম দেখে৷ বাংলাদেশের যে মৌলিক সমস্যা সেগুলোর অনুসন্ধান করে প্রকাশ করতে পারছে না বাংলাদেশের গণমাধ্যম৷
তারা বলেন, এতকিছু বাধা অতিক্রম করেও যতটা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহলের রোষাণলে পড়ে বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এতে করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দিকে আরও অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অনুকূল পরিবেশ নেই বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ