মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মে) উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে মিল রেখে ফিলিস্তিনেও পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। কিন্তু ঈদুল ফিতরের দিনেও ইসরায়েলি বোমারু বিমান ঝাঁকে ঝাঁকে এসে গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করছে। এভাবে বোমা হামলার মধ্য দিয়েই ফিলিস্তিনে শুরু হয় ঈদের সকাল।
এতে মলিন হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ।
কিছুক্ষণ পরপর ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান থেকে বোমা গিয়ে পড়ছে গাজা শহরে। ভবনগুলো কেঁপে উঠছে বোমার শব্দে।
ঈদের দিনেও চলছে হামলা
বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনেও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় গাজার বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। গত কয়েকদিনের টানা এই হামলায় ভূখণ্ডটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ জনে। নিহতদের মধ্যে ১৭ জন শিশু।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর দফায় দফায় বিমান হামলায় ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটি। বৃহস্পতিবার সকালেও বোমা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আর এর মধ্যেই উদযাপনহীন রক্তাক্ত এক ঈদ পার করছেন ফিলিস্তিনিরা।
বুধবার সারা রাত আর বৃস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর তীব্র বোমা হামলার বিষয়ে আলজাজিরার সাফওয়াত আল-কাহলাউত বলছেন, ‘গাজার বেশিরভাগ মানুষ সারা রাত জেগে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপরই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে, আর তাতে কেঁপে উঠছে আশপাশের ভবনগুলো।’
স্থানীয় কয়েকটি সূত্র বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের ভবন ছাড়াও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর কয়েকটি ভবনেও হামলা চালানো হয়েছে। গাজা শহরের পার্শ্ববর্তী তেল আল-হাওয়া এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার সন্তান নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকটি এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এটা সবে শুরু। আমরা তাদের এমনভাবে আঘাত করবো যেটা তারা কখনও কল্পনাও করতে পারবে না।
নেতানিয়াহুর ওই বক্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের আশদোদ নগরীর দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছুটে যায়।
এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনও হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী প্রায় দেড় হাজার রকেট ছুড়েছে। ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থান লক্ষ্য করে এসব রকেট হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের এক শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।
হুমকি উপেক্ষা করেই আল-আকসায় ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল
দখলদার বাহিনীর হুমকি ও বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই পবিত্র আল আকসা মসজিদে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশ নিয়েছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার চলমান সংঘাত পরিস্থিতিতেই পবিত্র মসজিদটিতে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন কয়েক হাজার মুসল্লি।
খবরে বলা হয়, ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলা ও আল-আকসায় তাণ্ডবের জেরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এবারের ঈদুল ফিতরের সব আয়োজন বাতিল ঘোষণা করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
কিন্তু তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদটিতে মুসল্লিদের ঢল নামে। পুরুষদের পাশাপাশি নারী-শিশুদের আকসা কম্পাউন্ডে দেখা যায়।
ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে জাতিসংঘের সদর দপ্তর ঘেরাও
জেরুজালেমে পবিত্র আল আকসা মসজিদে হামলা ও গাজায় বেসামরিক লোকজনের ওপর ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তর ঘেরাও করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
ইসরায়েলের এ বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় মানবাধিকার কর্মীরা বুধবার এ বিক্ষোভ দেখান।খবর আনাদোলুর।
তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে সহস্রাধিক মানবাধিকার কর্মী জাতিসংঘের সদর দপ্তর ঘেরাও করে ইসরায়েলবিরোধী শ্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় তারা ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরব ও বিশ্ব নের্তৃবৃন্দের রহস্যজনক নীরবতারও কঠোর সমালোচনা করেন।
এতে ওয়েলফেয়ার এন্ড জাস্টিস অ্যাসোসিয়েশন (রেফাহডের), জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভলাপম্যান্ট এবং দ্যা অ্যাসোসিয়েশন অব টরচার ভিকটিমস নামে মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরাও যোগ দেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আরও ছিলেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্নার নাতি হানি রামাদান।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, জেরুজালেম তথা ফিলিস্তিনে যেভাবে মানবাধিকার লঙঘন হচ্ছে, এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীর এখনই সোচ্চার হওয়া দরকার।
নির্যাতিত মুসলিমদের সঙ্গে আমরা আছি, তারা একা নন।সেখানে মানবাধিকার রক্ষায় যা করা দরকার, তাই আমরা করবো। তারা ইসরায়েলকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যায়ীত করে দ্রুত দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সহিংসতা থামাতে ব্লিঙ্কেনের টেলিফোন
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতা বন্ধে টেলিফোনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে ব্লিঙ্কেন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস ব্লিঙ্কেনকে উদ্ধৃত করে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের স্বাধীনতা, মর্যাদা, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির অধিকার আছে।
আগের দিন ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকেও টেলিফোন করেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত থামাতে দূত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। জবাবে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
এমন পরিস্থিতিতে সংঘাত থামানোর চেষ্টায় ওই অঞ্চলে দূত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের চিত্রকে ‘যন্ত্রণাদায়ক’ অ্যাখ্যা দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে জ্যেষ্ঠ সহযোগী হাদি আমরকে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্লিংকেন।
আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে ফিলিস্তিনের মানুষেরও নিরাপত্তা ও নিরাপদে থাকার অধিকার আছে।
অন্যদিকে পেন্টাগন প্রধান লয়েড অস্টিন ‘ইসরাইলের নিজেকে রক্ষার বৈধ অধিকারের’ প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, আটকে গেল যৌথ বিবৃতি
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বুধবার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতি নিয়ে আবারও জরুরি বৈঠক হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতায় কোনো যৌথ বিবৃতি ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
বৈঠকে উপস্থিত এক কূটনীতিক বলেন, উত্তেজনা নিরসনে এই বিবৃতি সহায়ক হবে না বলেই মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪টিই উত্তেজনা নিরসনে যৌথ বিবৃতি দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতির প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘের মার্কিন মিশনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত টর ওয়েনেসল্যান্ড বৈঠকে সতর্ক করে বলেন, গত সোমবার থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সোমবারই এ নিয়ে প্রথম বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তিউনিসিয়া, নরওয়ে ও চীন প্রস্তাবটি এনেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর মুখে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ