মুনিয়ার আত্মহত্যা নিয়ে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্ত সূত্রে জানা যায়, আত্মহত্যার দিন সকালেই আত্মগোপন করতে যশোর যেতে চেয়েছিলেন মুনিয়া। কিন্তু যে আত্মহত্যা করবে, সে কেন কোথাও গিয়ে আত্মগোপন করতে চাইবে? আবার মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহানও বলেছেন, ঘটনার দিন সকালে তাদের দ্রুত ঢাকায় আসতে বলেছিলেন মুনিয়া। কেন এতো ভয় পেয়েছিলেন? কেন একটি ‘দুর্ঘটনা’ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন? কিংবা আত্মহত্যাকারী কেন তার বোনকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলবেন? অজস্র প্রশ্ন প্রতিনিয়ত জটিল করে তুলছে এই মামলার সমীকরণকে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া ‘আত্মহত্যা’য় প্ররোচনার অভিযোগ এনে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
আত্মগোপন করতে চেয়েছিল মুনিয়া
রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ যেদিন মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে, ওইদিন সকালেই যশোর যেতে চেয়েছিলেন তিনি। যশোরে নুরজাহান ওরফে আফরোজা নামে এক বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এর জন্য সকালে ফ্ল্যাট মালিকের কাছে ফোন করে ব্যক্তিগত গাড়িটাও চেয়েছিলেন। কিন্তু গাড়ি না পাওয়ায় তার যশোর যাওয়া হয়নি। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় তার বাসা থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, মুনিয়া যে ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন সেই বাসাটি ইব্রাহীম আহমেদ রিপন নামে এক ব্যবসায়ীর শাশুড়ির। ইব্রাহীম আহমেদ ও তার স্ত্রী শারমিন ফ্ল্যাটটি দেখভাল করেন।
ইব্রাহীম আহমেদ রিপন জানান, ফ্ল্যাটে ভাড়ায় ওঠার কারণে তার স্ত্রী শারমিনের সঙ্গে মুনিয়ার কিছুটা ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তারা একসঙ্গে জিম করতেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটনার দিন ভোর ৪টার দিকে শারমিনের মোবাইলে একবার কল করেছিলেন মুনিয়া। শারমিন তখন ঘুমিয়ে থাকায় কলটি রিসিভ করতে পারেননি।
সকাল ৮টার দিকে আরেকবার কল দেন মুনিয়া। এসময় মুনিয়া শারমিনের কাছে যশোর যাওয়ার জন্য তাদের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারটি চান। স্ত্রী শারমিনের বরাত দিয়ে স্বামী ইব্রাহীম আহমেদ রিপন আরও জানান, মুনিয়া তার স্ত্রীকে বলেন তিনি যশোরে তার এক বান্ধবী নুরজাহান ওরফে আফরোজার বাসায় যাবেন। সেখানে গিয়ে ৮-১০ দিন আত্মগোপনে থাকবেন।
বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও অনুরোধ করেন। কিন্তু চালক না থাকায় শারমিন গাড়িটি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর বিকালে তারা মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের খবর পান।
একমাত্র বসুন্ধরা এমডির যাতায়াত ছিল মুনিয়ার বাসায়
মুনিয়া যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার নিরাপত্তাকর্মী কুদ্দুস বলেন, ‘২০ এপ্রিল আনভীর সাহেব গাড়ি দিয়া নামায়া দিয়া গেছে। আগে তো ওনারে চিনতাম না। ম্যাডাম মারা যাওয়ার পর জানছি যে উনি বসুন্ধরার মালিক। ২১ এপ্রিল দুপুরের দিকে উনি আসছিলেন। মাগরিব পর্যন্ত ম্যাডামের বাসায় ছিলেন। ইফতারের পর বের হয়ে গেছেন। এর আগে একবার দুইবার আসছিলেন। এ ছাড়া অন্য কেউ আসতেন না।’
মুনিয়ার বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও একই তথ্য পেয়েছে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। মুনিয়ার অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়াও আশেপাশের সড়ক ও কয়েকটি বাসার সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহের পর বিশ্লেষণ করছেন তারা।
কুদ্দুস জানান, ‘এই বাসায় কোনও অতিথি আসলে রেজিস্ট্রারে নাম লিখে ইন্টারকমে ফোন করে বাসার ভেতর থেকে অনুমতি নিয়ে তারপর যেতে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কারও ভেতরে ঢোকার উপায় নেই।’
তদন্ত কতদূর এগোল?
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের প্রয়োজনে প্রতিদিনই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও লিখিত জবানবন্দি নে’য়া হচ্ছে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা বলছেন, সোমবার (৩ মে) পর্যন্ত আলোচিত এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজনের লিখিত জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, দুই নিরাপত্তাকর্মী কুদ্দুস, আইয়ুব, কেয়ারটেকার আতিক, ফ্ল্যাট মালিক ইব্রাহীম আহমেদ ও তার স্ত্রী শারমিন।
মঙ্গলবার (৪ মে) আরও কয়েকজনের লিখিত জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তবে স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ার কারণে তাদের নাম প্রকাশ করেননি তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা বলবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ