বিশ্বে পিঁপড়ের প্রায় ১২ হাজার প্রজাতি রয়েছে। এটি তার শরীরের ওজনের চেয়েও ২০ গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারে। পিঁপড়েদের মধ্যে একজন রাণী থাকে যার থেকে লক্ষাধিক বাচ্চা হয়। রানি পিঁপড়ের পাখা গজায়। পিঁপড়ের কান নেই। তাই মাটির কম্পন থেকেই শব্দের ব্যাপারটি বুঝে নেয়।
পিঁপড়ে সর্বদা একই রেখায় চলতে থাকে। চলার পথে প্রতিটি পিঁপড়েই এক ধরণের তরল পদার্থ (ফেরোমন) নির্গত করে। ফলে পিছনে থাকা পিঁপড়েগুলো সামনের গুলোকে অনুসরণ করতে পারে। রাণী পিঁপড়ের পাখা গজায়।
পিঁপড়ের ফুসফুস নেই। শরীরে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যার মাধ্যমে শরীরের ভিতর ও বাইরে অক্সিজেন চলাচল করে! সাধারণত পিঁপড়ের জীবনকাল ২৮ বছর। তবে রানি পিঁপড়ে ৩০ বছরেরও অধিক সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে। যখন
একটি পিঁপড়ে মারা যায় তখন তার শরীর থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। ফলে অন্য পিঁপড়েরা সহজেই মৃত পিঁপড়ে সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যায়।
যেভাবে চিকিৎসা করে পিঁপড়েরা
আফ্রিকান মেটাবেল পিঁপড়েরা যোদ্ধা— দিনে বেশ কয়েকবার তাদের বাসায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রণের ঘটনা ঘটে। যোদ্ধা উইপোকাদের সাথে লড়তে হত তাদের। এরপর খাবারের জন্য শ্রমিক উইপোকাদের তাদের আস্তানায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে হয়।
তারা তাদের আহত যোদ্ধা পিঁপড়ে যারা উইপোকাদের কামড়ে বিকলাঙ্গ হয়ে পেছনে পড়ে যায়, তাদেরও টেনে নিয়ে যায়।
সম্প্রতি জার্মান জীববিজ্ঞানীরা এই উদ্ধার কার্যক্রমের পর কী ঘটে তা আবিষ্কার করেছেন। বাসায় পিঁপড়েরা আহতদের চিকিৎসা দেয়। ক্ষত পরিষ্কার করে। চিকিৎসা সেবা দিয়ে মৃত্যুহার কমানোর চেষ্টা করে।
দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি-এর কার্যবিবরণীতে এই ‘অঅর্গানাইজড সোশ্যাল ওউন্ড ট্রিটমেন্ট’-এর বিবরণী প্রকাশিত হয়েছে। জুলিয়াস ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব ওয়ার্জবার্গের (জেএমইউ) গবেষক দল এর উপর বিস্তারিত কাজ করছেন।
গবেষক এরিক ফ্র্যাংক এবং দুই সহকর্মীর রিসার্চ থেকে এ প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত জানা যায়। ‘মারাত্মক আহত পিঁপড়ে’— যাদের পাঁচটি পা ভেঙে যায়, তাদের ফেলে রেখে আসা হয়। মৃত্যুর জন্য। তবে এই সিদ্ধান্ত সুস্থ সবল পিঁপড়েরা নেয় না। মারাত্মকভাবে আহত পিঁপড়েরা তাদের উদ্ধার করতে আসলে সহযোগিতা করে না। যেন অনেকটা বুঝিয়ে দেয়, তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে। শক্তি আর সময়ের অপচয় করে তাদের নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই উদ্ধার করতে যাওয়া পিঁপড়েদের, তাদের ফেলে রেখে আসতে, একপ্রকার বাধ্য করে তারা।
‘অল্প আহত পিঁপড়েরা’ অন্যদিকে আশপাশে তাদের বাসার অন্যান্য পিঁপড়েদের দেখলে বেশি আহত হবার ভান করে, যাতে তাদের দ্রুত সাহায্য করা হয়। যখন অনাহত পিঁপড়েদের দৃষ্টি তারা আকর্ষণ করতে পারে, তখন তারা সাহায্য করে, যাতে তাদের সহজে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়।
এরপর যখন পুরো দল বাসায় ফিরে যায়, তখন আহতদের চিকিৎসা শুরু হয়।
পিঁপড়েরা আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসায় তাদের ক্ষত নিবিড়ভাবে কয়েক মিনিট ধরে চেটে দেয়, জেএমইউ তাদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
এ প্রসঙ্গে ফ্র্যাংক বলেন আমরা ধারণা করি যে তারা ক্ষত পরিষ্কার করতে এমনটা করে থাকে। একই সাথে তাদের মুখের লালায় থাকা এ্যান্টিমাইক্রোবায়াল পদার্থ ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়, যাতে সেখানে ব্যাক্টেরিয়াল অথবা ফাঙ্গাল ইনফেকশন না হয়।
এবং এই চিকিৎসা কাজে দেয়। যদি আহত যোদ্ধা পিঁপড়েরা এই চিকিৎসা না পায়, তাহলে ৮০ শতাংশ আহত পিঁপড়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা যায় বলে দ্য গার্ডিয়ানকে জানান ফ্র্যাংক। যদি এই চিকিৎসা এক ঘন্টা দেয়া হয়, পিঁপড়েরা বেঁচে যায়।
বিশেষত, ওইসব পিঁপড়েদের মৃত্যুহার মাত্র ১০ শতাংশ, যাদের ক্ষতস্থান অন্যান্য পিঁপড়েরা পরিষ্কার করে দেয়।
ফ্র্যাংক নিউ সায়েন্টিস্টকে জানায়, সুস্থ হবার পর আহত পিঁপড়েরা সুস্থ পিঁপড়েদের গতিতে দৌঁড়তে পারে।
কেন চিকিৎসা করা হয় পিঁপড়েদের?
এই সমস্ত আহত পিঁপড়েদের বাঁচিয়ে রাখা স্ব স্ব কলোনির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এটা খুব সহজেই ভেবে নেয়া হয়, পিঁপড়েদের আহত হওয়া কিংবা মারা যাওয়া, ওদের কলোনির জন্য খুব বেশি মাথাব্যথার নয়। তবে তা ঠিক নয়। পিঁপড়েদের কলোনিগুলো খুব একটা বড় হয় না। প্রতিদিন খুব বেশি হলে দশ বা বারোটা বাচ্চা পিঁপড়ে জন্ম নেয়।
তাই প্রতিদিন এক বা দু’টি পিঁপড়ের মারা যাওয়া, বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই তাদের মৃত্যুহার কমানোর উপায় নিয়ে ভাবতে হয়। ফ্র্যাংক বলেন, কলোনিতে প্রতিটা পিঁপড়েই প্রয়োজনীয়।
পিঁপড়ের এই আচারণ অন্যান্য প্রানীদের একে অন্যের দেখভাল করার সাথে মেলানো যায়।
তবে ফ্র্যাংক বলেন, আহতদের এই চিকিৎসার কাজটা পিঁপড়েরা উদারতার জায়গা থেকে করে না।
তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে এই কাজটা করে না। বরং আহত পিঁপড়েদের কাছ থেকে পাওয়া এক প্রকার রাসায়নিক সংকেতের কারণে এটা করে থাকে।
পেগি ম্যাসন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো’র একজন নিউরোবায়োলজিস্ট। তিনি ইঁদুরের উপর গবেষণা করেন। কীভাবে একটি ইঁদুর ফাঁদে পড়া অন্য ইঁদুরকে সহায়তা করে, এই নিয়ে তার গবেষণা। তিনি বলেন, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পিঁপড়েরা আহতদের চিকিৎসা করে থাকে।
তবে পিঁপড়ের এই আচারণকে স্তন্যপায়ীদের চিকিৎসা সেবার সাথে তুলনা করা যায় না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃত আহতদের সেবা করে না।
কারণ তারা শিকারে যাওয়ার পথে একই আহত পিঁপড়ে দেখলেও এড়িয়ে যায়। শুধুমাত্র যুদ্ধের পর আহতদের পিঁপড়ের বাসায় বয়ে আনা হয়।
অন্যদিকে ইঁদুরের মধ্যে আহতদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে আবেগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
এসডব্লিউ/এমন/এসএস/২০৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ