হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ শনিবার (১৭ এপ্রিল) থেকে বিশেষ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বাংলাদেশে থেকে মোট সাতটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আজ শনিবার বাতিল করা হয়েছে।। এ ঘটনায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কারওয়ার বাজার এলাকায় সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক শ সৌদিগামী অভিবাসী শ্রমিক।
সাতটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সৌদি আরবগামী পাঁচটি ফ্লাইট ও ফ্লাই দুবাইয়ের দুবাইগামী দুটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান।
তিনি বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অবতরণের অনুমতি না পাওয়ায় বিমান ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় জেদ্দার ফ্লাইটটি যাবে বলে তারা জানিয়েছে।’
তৌহিদ-উল আহসান জানান, ফ্লাই দুবাই তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে যাত্রী স্বল্পতার কারণে।
বিমানবন্দরের ভিন্ন একটি সূত্র বলছে, রাত আটটা পর্যন্ত শিডিউলের ১৬টি ফ্লাইট বাতিল দেখাচ্ছে।
এদিকে অবতরণের অনুমতি না নিয়ে কেনো বিমানের সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ (বেবিচক)। বিমানের বিশেষ ফ্লাইটগুলো চলার কথা ছিল সৌদি আরবের শহর রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাই ও আবুধাবি, ওমানের মাসকাট, কাতারের দোহা ও সিঙ্গাপুরে।
এদিকে সাতটি ফ্লাইট বাতিলের কারণে বিদেশগামী যাত্রীদের দুভোর্গ চরমে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য রিয়াদগামী বিজি৫০৩৯ ফ্লাইটটি ৩১৪ জন যাত্রী নিয়ে সকাল সোয়া ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে প্রবাসী কর্মীরা শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বিমানবন্দরে আসতে থাকেন।
তারা বলছেন, লকডাউনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশি ভাড়ায় যানবাহনে নানান ঝামেলা পার করে তারা এসে রাত ২টায় জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল। এরপর বিমানবন্দরে যাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সকাল সোয়া ছয়টায় বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীরা সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে ও ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে সিভিল এভিয়েশনের লোকজন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের অভিযোগ, সময় মতো সংশ্লিষ্ট দেশে যেতে পারলে না তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা কেজে যোগ দিতে পারবেন না এবং এ সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে যাবেন।
বেশ কয়েকজন অভিবাসী শ্রমিক গণমাধ্যমকে জানান, দেশব্যাপী লকডাউন চলায় বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতেই তাদেরকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অথচ ফ্লাইট বাতিলের বিষয়টি তাদেরকে জানানো হয়েছে একেবারে শেষ মুহূর্তে।
তারা জানান, বিমান কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট বাতিলের বিষয়টি আগে জানালে তাদেরকে এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
এদিকে ফ্লাইট বাতিলের প্রতিবাদে রাজধানীর কারওয়ার বাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেলের সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছেন সৌদি আরবগামী প্রবাসীরা। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে তারা এই বিক্ষোভ করছেন।
বিক্ষোভকারীদের বরাতে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে আজ ঢাকায় এসেছেন এসব প্রবাসীরা। কিন্তু, এসে ফ্লাইট বাতিলের বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারর বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ তারা আর কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাননি বলে জানান। সে কারণেই দারা বিক্ষোভ করছেন।
অপেক্ষারত সৌদিগামী যাত্রীরা বলেন, আজ সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল; সেটি ছাড়বে কিনা, তারা যেতে পারবে কিনা—এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি। এখন পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের কেউ আমাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি, বিষয়টি জানার জন্য।
এ বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আল ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার নির্দেশনা অনুযায়ী, কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রাওনা হবে। কিন্তু কখন ফ্লাইট চালু হবে কিংবা ছেড়ে যাবে কিনা—এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভোর থেকে অনেকে সৌদি এয়ারলাইনস অফিসের সামনে অপেক্ষা করছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি এবং অপেক্ষারত জনসাধারণের সঙ্গেও কথা বলছি। কর্তৃপক্ষ এখনও কিছু জানায়নি। ফ্লাইটের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রবাসীরা জানান, গতকাল রাতে প্রবাসীরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছেন আজ (শনিবার) থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট দেয়া হবে। এমন খবর পেয়ে তারা সকাল ছয়টা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের সামনে অবস্থান নেন। কিন্তু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ লকডাউনের অজুহাতে এবং ফ্লাইট চলাচল নিষেধাজ্ঞার কথা বলে টিকিট না দেয়ার কথা জানিয়েছে। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা কারওয়ান বাজার মোড় অবরোধ করেন। একঘণ্টা অবরোধে আশেপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সবাইকে তাদের অফিসে নিয়ে যান এবং টিকিট দেয়ার আশ্বাস দেন।
সৌদি প্রবাসীদের বিড়ম্বনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, লকডাউনের কারণে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শিডিউল এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন তারা নতুন করে টিকিট দিচ্ছেন। তবে সেই টিকিটে লকডাউনের পরে ফ্লাইট স্বাভাবিক হলে তারা যাতায়াত করতে পারবেন।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিজ নিজ কর্মস্থলে পৌঁছানোর সুবিধার্থে আজ থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে প্রায় ১০০টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গত ১৫ এপ্রিল এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত ১১ এপ্রিল বেবিচক জানায়, ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন চলাকালীন সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।
পরে গত ১৫ এপ্রিল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে শনিবার থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের কারণে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরাতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ