আপনি যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে কখন আপনার জন্য টিকা নেয়া উত্তম হবে? এ প্রশ্নের উত্তর জানা সবার জন্যই আবশ্যক। এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি মিল্কেন ইনস্টিটিউট স্কুল অব পাবলিক হেলথের জরুরি চিকিৎসক, ভিজিটিং প্রফেসর ড. লিয়ানা ওয়েন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার অর্থাৎ টেস্টে নেগেটিভ হওয়ার ৪ সপ্তাহ পর করোনার টিকা নিতে পারবেন। এর মধ্যে যারা প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর আক্রান্ত হয়েছেন তারা নেগেটিভ (সুস্থ) হওয়ার ৪ সপ্তাহ বা ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন। যারা এখনো প্রথম ডোজ টিকা নেয়নি, তবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন- তাদের সুস্থ বা টেস্ট রিপোর্টে নেগেটিভ আসার ২৮ দিন পর টিকা নিতে হবে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। ওই এন্টিবডি কাজে লাগে। তাই টেস্টে নেগেটিভ হওয়ার এক মাস পর টিকা নিতে হয়। এ নিয়ম বিশ্বব্যাপী। কেউ কেউ তিনমাস পরও নিতে পারেন। বিশেষ করে যারা প্লাজমা থেরাপি নিচ্ছেন তারা নেগেটিভ হওয়ার তিন মাস পর টিকা নিতে পারেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মিডিয়া সেলে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, করোনা আক্রান্তরা সুস্থ হওয়ার এক মাস পর টিকা নিতে পারবেন। প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের বেলায় একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল শাখার পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সুস্থ অর্থাৎ নেগেটিভ হওয়ার ২৮ দিন পর টিকা নেয়ার নিয়ম করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ প্রক্রিয়ায় এখন টিকা দেয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে ফাইজার/বায়োএনটেক এবং মডার্নার টিকা ৬ মাস পর্যন্ত উচ্চ মাত্রায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। যেহেতু এই টিকাগুলো নতুন, তাই গবেষকরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না একজন মানুষ টিকা নেয়ার পর কতদিন রোগমুক্ত থাকবেন। অনেকেই এক্ষেত্রে ৬ মাসের বেশি রোগমুক্ত থাকার প্রত্যাশা করতে পারেন।
প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও কেন আক্রান্ত?
সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা বলছেন, দেশে অনেকেই করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের একাংশ নতুন করে আবার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এই টিকা দেওয়ার উদ্দেশ্য কোভিডের বিস্তার রোধ করা এবং তীব্র কোভিড থেকে সুরক্ষা দেওয়া। সর্বোপরি করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে এনে জীবনযাত্রা যথাসম্ভব স্বাভাবিক করা। টিকা দেওয়ার অর্থ এই নয় যে কারও আর কখনো কোভিড হবে না। তার ওপর আবার একটি ডোজ নিয়েই তা আশা করা যায় না! অথচ প্রথম ডোজ নিয়েই অনেকে স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া চলাচল শুরু করেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন।
টিকার পুরো সুফল কি প্রথম ডোজ থেকেই পাব?
এর উত্তর হচ্ছে, না! প্রথম ডোজের দুই কি তিন সপ্তাহ পর শরীরে কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা থেকে আমরা আংশিক সুরক্ষা পেতে পারি। দ্বিতীয় ডোজের পর এর পুরো সুফল পেতে আরও দুই কি তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। এখানেও আবার ‘কিন্তু’ আছে। দুটি ডোজ নেওয়ার পরও শতভাগ মানুষ কিন্তু এর থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাবেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ডের টিকা ৭৬ থেকে ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেবে। তার মানে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও ২১ থেকে ২৪ শতাংশ মানুষ সুরক্ষা পাবেন না। তারা যেকোনো সময় কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। সে জন্যই টিকা নেওয়ার পরও কিছুদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, যারা টিকা নিয়েছেন করোনা হলেও তাদের রোগের জটিলতা বা তীব্রতা কমে যাচ্ছে। এভাবেই হয়তো সিংহভাগ মানুষ টিকা নেওয়ার পর আমরা সুফল পেতে শুরু করব। টিকা পরিবেশ বা সমাজে ভাইরাসের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে অনেক দেশে। সেভাবেও আমরা সুফল দেখতে পাব আরও অনেক মানুষ টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নেওয়ার পর।
টিকা অবশ্যই নেবেন
টিকার প্রথম ডোজ নিয়েও যারা কোভিড পজিটিভ হলেন তারা হতাশ হয়ে ভাবছেন তাহলে আর টিকা নেবই–বা কেন? অবশ্যই নেবেন। কারণ, করোনা রি-ইনফেকশন বা আবার হবে না, এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। আর টিকা নেওয়ার উদ্দেশ্য অতিমারিকে প্রতিহত করা, সবাই টিকা না নিলে তা কখনোই সম্ভব হবে না। তবে সব কথার শেষ কথা হলো, কোনো টিকাই যেহেতু শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না, কোভিড নির্মূল হওয়ার আগপর্যন্ত তাই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ