করোনা সংকট মোকাবিলায় মে মাসেই ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়া জোট কোভ্যাক্স থেকে এ টিকা পাওয়া যাবে। গতকাল সোমবার (১২ এপ্রিল) বিশ্বব্যাংক থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।
একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। তবে চলমান টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, কঠোর লকডাউন কার্যকর হয় এবং দ্রুত বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় তাহলেই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সিনিয়র ইকোনমিস্ট বানার্ড হ্যাভেন।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির হ্রাস-বৃদ্ধি মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। ওই বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করেই বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেছে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টিকাদান কর্মসূচির গতিপ্রকৃতি, চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার।
এতে আরো বলা হয়, করোনার কারণে গত অর্থবছরে দেশের দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের জরিপে উঠে এসেছে।
তবে করোনার প্রথম ধাক্কা সামাল দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি। যদিও সামনের দিনগুলোয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অনিশ্চয়তাও রয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (গত জুলাই-জানুয়ারি) ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রমবাজারে আবার চাঞ্চল্য এসেছে, অনেকেই কাজে ফিরতে শুরু করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, লকডাউনের মতো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ায় অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষ সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছে। এমন গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি নগদ সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার।
টিকা কিনতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি
করোনার টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঋণ চুক্তি করেছে সংস্থাটি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিশ্বব্যাংকের এ অর্থায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিলের সাধারণ শর্ত প্রযোজ্য হবে। ঋণটি ৫ বছরের গ্রেস (রেয়াতকাল) পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এর সুদের হার হবে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ, সার্ভিস চার্জ হবে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপার্ডনেস’ প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ঋণ সহায়তা হিসেবে এ ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ১১ এপ্রিল ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন চুক্তিতে সই করেন।
এতে আরও বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় ইতোমধেই ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল ১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি। এই প্রকল্পের আওতায় এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকেও ১০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া গেছে। এর ধারাবাহিকতায় টিকা কেনার জন্য চলমান প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে টিকা কেনা ও সরবরাহ করা। কোভ্যাক্স থেকে অগ্রিম টিকা কেনার মাধ্যমে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশকে টিকা দেওয়া যাবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ভ্যাকসিন টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টিকা সংরক্ষণ এবং বিতরণে কোল্ড চেইন সিস্টেম অক্ষুণ্ন রাখার মাধ্যমে টিকার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১১০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ