করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার যে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখনও মসজিদ-মাদ্রাসায় কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এছাড়া রমজানে তারাবি, জুমা, ইতেকাফসহ সব আমল স্বাভাবিকভাবে অব্যাহত রাখতে মসজিদ খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (১১ এপ্রিল) বিকালে হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলনে জুনায়েদ বাবুনগরী এই দাবি জানান। এ সময় হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাবুনগরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘লকডাউন দিয়ে আমাদের মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করা যাবে না। নুরানি, দীনি, কওমি, যেখানে হাদিস-কুরআন পড়ানো হয়, সেগুলো বন্ধ করা যাবে না। আমরা নুরানি-হেফজখানা চালু রাখছি। যেখানে কুরআন-হাদিস পড়ানো হয়, এর বরকতে করোনা আসবে না। আল্লাহর রহমতে মাদ্রাসার কোনো ছাত্র করোনায় আক্রান্ত হননি। যারা বেশি করোনা থেকে বাঁচতে চায় তাদের করোনা ধরে।’
গত ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে ভাঙচুরের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ যে ঘটনা ঘটেছে, ওই দিন হেফাজতে ইসলামের কোনও কর্মসূচি ছিল না। জাতীয় ও আঞ্চলিক কোনও জায়গায় আমাদের কোনও কর্মসূচি ছিল না। এ কারণে বিষয়টি আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম না। আমি নিজেও অনেক দূরে ছিলাম।
কিছু মানুষ মিছিল বের করেছে, তারা বলেছে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেছি। এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রশাসনের কিছু লোক, পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে। হাটহাজারীতে চারজনকে হত্যা করেছে। আমাদের কথা হচ্ছে তারা কারা আমরা জানি না, আমরা ছিলামই না।
জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, তারা যদি কিছু ভাঙচুরও করে, তাহলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে পারে। রাবার বুলেট ছুঁড়তে পারে। এরপর গুলি করতে হলেও হাঁটুর নিচে গুলি করবে। যেন উত্তেজনা দমন হয়ে যায়। কিন্তু আমি সফরে ছিলাম, সফর থেকে আসার পথে হাসপাতালে গিয়েছি। চমেক হাসপাতালে সেখানে চারজন লাশের কারও পেটে গুলি, কারও বুকে গুলি, কারো মাথায় গুলি দেখেছি। এগুলো কি দেশের আইন?
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজত আমীর বলেন, আজকে আমাদের বৈঠকে কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি, কাউকে প্রত্যাহার অথবা অব্যাহতি দেওয়ার কোনও আলোচনা হয়নি। মামুনুল হকের বিষয়ে আমাদের একটি জবাব এটি উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এর বাইরে আমরা এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।
পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। যাদের কপালে আছে শহীদ হওয়া, শাহাদাত বরণ করার। তাদের কপাল ভালো। এমনিতেও তো মরতে হবে। যা হওয়ার আছে, হয়ে গেছে। মাদ্রাসা এখন বন্ধ। কিন্তু প্রতি রাতে এলাকায় পুলিশ, র্যাব বের হয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতেছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে, গ্রেফতার করতেছে, চালান করে দিচ্ছে। এই জুলুম নির্যাতন কেন করা হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, এই সমস্ত হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
হেফাজতের নামে মিথ্যা মামলা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার নামেও ১৭টি মামলা আছে। তিনটাতে আমি জামিনে আছি। যাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা সালাউদ্দিন নানুপুরী, আজিজুল হক ইসলামাবাদিসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৩৩
আপনার মতামত জানানঃ