করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে ভারতের নানা প্রান্তে। করোনার রাশ টানতে ইতিমধ্যেই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও তিনি জানিয়েছেন দ্বিতীয়বারের জন্যে দেশে লকডাউন করা হবে না তবে তিনি টিকাকরণের উপর জোর দিয়েছেন।
দেশে টিকাকরণের তৃতীয় পর্যায় চলছে। তবে টিকাকরণের পর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব সামনে এসেছে। মার্চের শেষে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে করোনা টিকা নেওয়ার পর মারা গিয়েছে ১৮০ জন। যা রীতিমতন চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসক ও গবেষকদের।
৩ দিনের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মৃত্যু
ন্যাশনাল অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন (National AEFI Committee) একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে টিকা নেওয়ার তিন দিনের মধ্যে। শুরু থেকেই টিকা নেওয়ার পর প্রথম তিনদিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক ও গবেষকরা।
ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর ভারতে টিকা নেওয়ার পর মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রচুর মিল দেখা গিয়েছে। সে কারণে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ, যারাই টিকা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধা বা অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কম হওয়ার ঘটনা দেখা যাচ্ছে, তাদের সবই হচ্ছে দু’সপ্তাহের মধ্যে। সেই বিষয়টিকেও নজরে রাখতে বলা হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত সারা দেশে টিকা নেওয়ার পর প্রায় ৭০০ টি ‘গুরুতর অসুস্থ’ হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। যাঁদের মূলত রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা ধরা পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন টিকার কারণে মৃত্যুর কারণে মানুষের টিকা নেওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দিয়েছে। ফলে সরকার এখনও পর্যন্ত অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
শুধুমাত্র গুজরাট এবং ছত্তিশগড় ছাড়া আর কোনও রাজ্যেই ২০ শতাংশ মানুষকে এখনও টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রের দাবি, সরকারের কাছে এখনও যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন মজুত আছে। শুধুমাত্র মানুষের আগ্রহ কম থাকায় টিকাকরণের হার কম। টিকা নেওয়ার পর একের পর এক মৃত্যু যে মানুষের আগ্রহ আরও কমাবে তাতে সংশয় নেই।
ভারতে এখনো পর্যন্ত ৯ কোটি ৮০ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৬০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। টিকার সর্বাধিক ও যথাযথ ব্য়বহারের জন্যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ১১ থেকে ১৪ এপ্রিল প্রতিটি রাজয়ের ‘টিকা উৎসব’ পালন করার ডাক দিয়েছেন।
ভারতে টিকা নিয়ে প্রথম মৃত্যু
জানুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের একটি সরকারি হাসপাতালের একজন কর্মী টিকা নেয়ার ২৪ ঘণ্টা পর মারা যান। তার বয়স ৪৬ বছর।
যদিও জেলার প্রধান মেডিকেল অফিসার বলেছেন টিকা নেয়ার সাথে এই মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই। উত্তর প্রদেশের সরকার বলছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ হার্ট এবং ফুসফুসের রোগজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
ভারতে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ভারতে। করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে উদ্যোগ নিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১,৪৫,৩৮৪ টি নতুন আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। করোনা কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৭,৫৬৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯৪ জন। প্রসঙ্গত, গতকাল করোনার জেরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল গত ২৪ ঘণ্টায় ১,৩০, ৬০,৫৪২ জন।
গত পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিনই দৈনিক সংক্রমণ এক লাখের বেশি ছিল দেশটিতে। বিশ্বে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই ভারত। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির এই চিত্র উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। কোনো কোনো রাজ্যে ভ্যাকসিনের সংকটও দেখা দিয়েছে। মুম্বাইর বেশ কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্র আজ ভ্যাকসিন সংকটের কারণে বন্ধ থাকছে। করোনা থেকে বাঁচতে দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাডুর বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ