হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, মহাসচিবসহ ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। মোদিবিরোধী আন্দোলনের পর তাদের ব্যাংকে কী পরিমাণ লেনদেন হয়েছে-তা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার হিসাব তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্যাংক হিসাব তলবকৃত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, মহাসচিব নূর হুসাইন কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাইল করীম, মহাসচিব সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল-হাইয়্যাতুল উলয়াও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রমুখ। এই নেতারাসহ বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
এদিকে, সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনা উসকানিতে সংঘাত সৃষ্টির পর এবার বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের তহবিল তছরুপের। গত ৭ বছর ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আর্থিক সহায়তার কোনো হিসেবেই নেই।
সদ্যপ্রয়াত সংগঠনটির প্রধান আল্লামা আহমদ শফী অন্তত ৫ বার কমিটি গঠন করেও সংগঠনের কোনো হিসাব বের করতে পারেননি। বারবার বর্তমান আমির এবং তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী কৌশলে কমিটিগুলো ভেঙে দিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও সংগঠনের অডিটর মাওলানার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও অডিটর মাওলানা সলিমল্লাহ বলেন, বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে ইঙ্গিত করে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছেন, তার কাছে তহবিল তছরুপের সব তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
তিনি বলেন, তার চিকিৎসা বাবদ ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন, চিকিৎসা বাবদ ২০ লাখ টাকার হিসাব এখন পর্যন্ত দিয়েছেন? আল্লামা শায়খুল ইসলাম আহমদ শফী (র.) যে ২৫ লাখ টাকা ক্যাশ দিয়েছিলেন। এই ক্যাশ কোনো খাতে জমা হয়েছে কি না?
এদিকে সংগঠনের আরেক সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহীও অভিযোগ করেছেন, তৎকালীন আমির আল্লামা আহমদ শফীকে এড়িয়ে বর্তমান কমিটিতে স্থান পাওয়ারা খালি চেকের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
২০১০ সালে নারী নীতির বিরোধিতা করে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেই গঠন হয় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে প্রতিষ্ঠা হওয়া গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে প্রচারে আসে সংগঠনটি। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা আহমদ শফী মারা যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই কৌশলে আমির হন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী।
বিশ্লেষকরা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হেফাজত এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে একধরণের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহাবস্থান থাকলেও মোদী ইস্যুতে সেখানে ভাটা পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পরিস্থিতি এতো দ্রুত এমন সংঘাতপূর্ণ কীভাবে হয়ে উঠলো আর রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে – তা নিয়ে এখন চলছে নানা বিশ্লেষণ। তবে হেফাজতের যে সকল শীর্ষ স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে হেফাজতের নেতাদের অব্যশই বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ