মুজিব রহমান : যে নারীকে নিয়ে মামুনুল হক সাহেবকে আটক করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে তা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভিন্নমতে বিভিন্ন কথা উঠছে। প্রশ্ন উঠেছে যে কোন নারীকে নিয়ে ওই নারীর সম্মিতিতে তিনি রিসোর্টে একান্তে সময় কাটাতে পারেন কিনা? প্রথম আলো এখানে অবকাশযাপন শব্দটি ব্যবহার করেছে, যা মামুনুল নিজেও করেননি। প্রগতিশীল মানুষ বলবেন- মামুনুলের অধিকার রয়েছে যে কোন নারীর সম্মতিতে তাকে নিয়ে হোটেলে একান্তে সময় কাটানোর। কিন্তু ওই নারী যদি অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী হয়, দুই সন্তানের জননী হয় ও বন্ধুর স্ত্রী হয় তাহলেও তা কি প্রশ্নহীন থাকবে? মামুনুলের নৈতিকতা, শিষ্টাচার ও শুদ্ধাচার নিয়ে কি প্রশ্ন উঠাতে পারি? ইসলামে বিয়ে সামাজিক চুক্তি। সেই চুক্তির শর্ত লংঘনের ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও উঠবে। অন্তত তিনটি বিষয় সামনে নিয়ে আলোচনা করতে পারি-
এক.
ওই নারী মামুনুলের ঘণিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী ছিলেন। মামুনুল নিজ স্ত্রীর কাছেও ফোনে বলেছেন বন্ধু শহিদুলের স্ত্রী। ফেসবুক লাইভে দাবি করেছেন- বন্ধুর সাথে স্ত্রীর মনোমালিন্যর কারণে ডিভোর্স হলে তিনি ওই নারীকে দুই বছর আগে বিয়ে করেন। মেয়েটির পিতা
একজন আওয়ামী লীগের নেতা (ওয়ার্ড সভাপতি) ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেছেন, এমন বিয়ের কথা তিনি শুনেন নি। এলাকাবাসী ও নারীর অন্য আত্মীয়রাও বলেছেন, তার বিয়ে হয়েছে খুলনায় সেঘরে দুই সন্তান রয়েছে কিন্তু ওই স্বামীর সাথে ডিভোর্স ও মামুনুলকে বিয়ের কথা তারা শুনেননি। দুই বছর আগে বিয়ের দাবি করলেও তারা একত্রে থাকেন না। ওই নারীর দুটি শিশু সন্তান রয়েছে ও আগের স্বামীও ডিভোর্স দিয়েছে তাহলে ঢাকার মোহাম্মদপুরে তিনি থাকার অর্থ পান কোথা থেকে- সেই প্রশ্নও উঠবে। ধরে নিলাম সেই অর্থ মামুনুল হকই দিয়ে থাকেন। যদি স্ত্রী হিসেবেই পরিচিতি থাকতো তার তবে বিষয়টি দ্বিতীয় কেউ অবশ্যই জানতো। দুই বছর গোপন রাখা অসম্ভবই। ওই নারী দাবি করেছেন তারা সরাসরি রিসোর্টে উঠেছেন আর মামুনুল দাবি করেছেন তারা জাদুঘর ও বিভিন্ন এলাকা দেখে রিসোর্টে এসেছেন বিশ্রাম নিতে। ওই নারী এখানে মিথ্যা বলেনি বলেই মনে হবে। মানে হল তারা শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্যই রিসোর্টে এসেছেন এবং ওই নারীর সাথে তার স্ত্রীর মতো নিয়মিত এমন সম্পর্ক ছিল না।
দুই.
মেয়েটির নাম মামুনুল এক রকম বলেছেন ওই নারী আরেক রকম বলেছেন। নারীর পিতা ও আত্মীয়স্বজনের বক্তব্যে দেখা যায় নারীটি নিজের নামটি সঠিক বলেছেন। মেয়েটির বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা হলেও মামুনুল দাবি করে বলেছিলেন খুলনা। এখানেও দেখা যাচ্ছে তিনি মিথ্যাই বলেছিলেন। এই দুটো ক্ষেত্রেই মামুনুলের সততা ছিল না। তিনি মেয়েটির পিতার নামও সঠিক বলেননি। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের সামনে তার আচরণ দেখেও মনে হয়েছে ডাল মে কুচ কালা হায়। তার ঠোঁট শুকিয়ে আসছিল। জ্বালাময়ী অনলবর্ষী বক্তা কেমন মিউ মিউ করছিলেন হয়তো ওই নৈতিকতার প্রশ্ন থাকার কারণেই। আল্লার কসম খেয়ে বিয়ের দাবি করলেও তিনি আবার কিছুক্ষণ পরেই নিজ স্ত্রীর কাছে দাবি করেন বন্ধুর স্ত্রী। অবস্থার প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়েছেন নিজের স্ত্রী পরিচয় দিতে। আবার ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন দুই বছর আগে বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন। তিনি এই দাবির সপক্ষে কোন কাবিনামাও দেখান নি। তিনি বারবার নিজের বক্তব্য পাল্টে বিপরীতে অবস্থান নিয়ে নিজের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধই করেছেন। নিজের স্ত্রীই হলে এতো টাকা (১৫০০০/-) খরচ করে সন্তানদের বাদ দিয়ে শুধু দুজনে রিসোর্টে উঠবেন কেন? সে প্রশ্নও উঠবে৷
তিন.
নারীটির স্বামী মামুনুলের ঘণিষ্ঠ বন্ধু। বন্ধু ও বন্ধুস্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স হতেই পারে। কিন্তু যখন মামুনুল বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে (?) করবেন তখনতো প্রশ্ন জাগবে বন্ধুর স্ত্রীর প্রতি কুদৃষ্টি তার ছিল বলেই ঝামেলা শুরু হয়েছিল। অথবা তাদের মধ্যেকার পরকীয়া সম্পর্ক নিয়েই আড়াই বছর আগে ঝামেলা শুরু হয় আর তার ছয় মাসের মধ্যেই মামুনুল গোপনে বিয়ে(?) করেন। এখানে বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে বন্ধুর স্ত্রীর প্রতি যৌনকাতরতার প্রকাশ ঘটেছে। পরস্ত্রীর প্রতি তার এই দৃষ্টিভঙ্গি নৈতিক কি না? ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ কি না? তিনি একটি সংসার ধ্বংস করে দিয়ে নারীটিকে ডিভোর্স করিয়ে নিজেও প্রকৃতপক্ষে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন নি। তাকে স্রেফ সাময়িক যৌনসঙ্গিই বানিয়েছেন। নারীটি স্ত্রী না রক্ষিতা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তিনি প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে যে অনুমতি নেননি তা ফোনালাপ ফাঁসে স্পষ্ট হয়েছে। দেশের আইনে এটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও প্রথম স্ত্রীও হয়তো সাবলম্বী না হওয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বা আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন না। তবুও নিশ্চিতভাবেই বলা যায় প্রথম স্ত্রীর সাথেও তিনি বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন।
উল্লিখিত বিষয় বিবেচনা করলে স্পষ্টভাবেই বলা যায়, এখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বহুমাত্রিক। নারীটি নিজের দুর্বল, অসহায়, বিব্রতকর ও সংকটপূর্ণ অবস্থার কারণে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে স্ত্রী/রক্ষিতা বা গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারেন নি। তিনি আদালতে না গেলেও মামুনুল হকের নৈতিকতা, শুদ্ধাচার, শিষ্টাচার পরিপন্থী কাজ নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। অন্তত দুই নারী ও এক বন্ধুর সাথে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আসবেই। এ নিয়ে এতো কথা উঠছে কারণ মামুনুল হক সাহেব কোন সাধারণ মানুষ নন। তিনি একজন শীর্ষস্থানীয় ধর্ম প্রচারক ও একটি প্রভাবশালী সংগঠনের শীর্ষ নেতা। সাধারণের সাথে মেলানোর সুযোগ নেই। ক্লিনটন ও মনিকার বিষয়টিও তুলনীয়। এমন কারণে ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিশংসন আনা হয়েছিল। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষপটও বিবেচনা করতে হবে। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে এতো কথা হচ্ছে।
মতামত ও বিশ্লেষন বিভাগে প্রকাশিত সকল মতামত লেখকের নিজস্ব এবং এটি State Watch এর সম্পাদকীয় নীতির আদর্শগত অবস্থান ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, স্টেটওয়াচ কর্তৃপক্ষের নয়।
আপনার মতামত জানানঃ