আজ শুক্রবার দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক রোগীর করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছ। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে আজ শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনায় সংক্রমিত ৬ হাজার ৮৩০ জন রোগীর শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। আর গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৫০ জন। গত দুই সপ্তাহে করোনায় শনাক্ত হয়েছে ৫৭ হাজার ৭৫৬ জন। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। ঠাঁই নেই আইসিইউয়ে, হাসপাতালগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগীর চাপে দিশেহারা। এরই মধ্যে টিকা নিয়ে নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এত বেশি সংখ্যক রোগী আর শনাক্ত হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় সংক্রমিত ৬ হাজার ৪৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। তার আগের দিন বুধবার শনাক্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৩৫৮ জন।
এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ হাজার ১৫৫ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ হাজার ৩৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
আইসিইউয়ের জন্য হাহাকার
সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকায় অনেক কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না -এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
ঢাকায় কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি ১০টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ১০৪টি। এর মধ্যে মাত্র চারটি শয্যা খালি ছিল গত ২৪ ঘন্টায়। আর নির্ধারিত বেসরকারি ৯টি হাসপাতালে ৩৭৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ৪৭টি। বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য বড় অংকের অর্থ গুনতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩৩টি জেলায় সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের যে হার তার ৪০ শতাংশের বেশি রোগী ঢাকাতেই।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার ড: লেলিন চৌধুরী বলেন, ঢাকার বাইরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো বাদ দিয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা এবং আইসিইউ ব্যবস্থাপনা উন্নত না হওয়ায় অনেক কোভিড১৯ রোগী চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসছে। পরিস্থিতি সামলাতে এখনই ব্যবস্থা না নেয়া হলে চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ পূর্ণ সীমা অতিক্রম করার পর্যায়ে এসেছে। যদি এখনই বিষয়টাকে সামাল দেয়া না যায়, তাহলে চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে।
তিনি মনে করেন, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কার পর চিকিৎসা ব্যবস্থায় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুবিধা কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরে যে পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল তা হয়নি।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে ভয়াবহতার ইঙ্গিত এসেছে। তিনি বলেছেন, করোনা গত এক সপ্তাহ যাবৎ ব্যাপকহারে বাড়ছে এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাচ্ছে এবং মৃত্যুর হারও বেড়ে গেছে। প্রতিদিন যদি পাঁচ হাজার করে শনাক্ত হয়, আর তার একটা অংশ যদি হাসপাতালে আসে, তাহলে হাসপাতালে জায়গা করা সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলো প্রায় ভরে গেছে।
হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে করোনাভাইরাসে প্রতিরোধের ব্যাপারে জোর দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। সরকারও ১৮ দফা নির্দেশনাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সম্প্রসারণ করে মহামারী নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিল সরকার। পরে রোগী কমে আসায় সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কয়েকটি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া হয়।
এরই মধ্যে ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হয় দেশে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক শনাক্তের হার নেমে আসে তিন শতাংশের নিচে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে সংক্রমণ আবার বাড়ছে দ্রুত গতিতে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীর সরকারি ১০টি কোভিড হাসপাতালের ২ হাজার ৫১১টি সাধারণ শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ২৬৫টি। আর ১০৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি আছে মাত্র ৫টি।
এর মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই।
ঠাঁই নেই হাসপাতালে
এরই মধ্যে অবস্থা কতটা নাজুক হয়ে উঠেছে, তা স্পষ্ট হল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল নাজমুল হকের কথায়। তিনি বলেন, “বিশাল চাপ এখন করোনা রোগীদের। কোনো বেড আমাদের ফাঁকা নেই। জেনারেল যারা মেডিসিনের কেইস নিয়ে আসছেন, তাদের নিতে পারছি না আমরা।”
“আমাদের কোভিড সার্জারি ও গাইনির কিছু বেড ফাঁকা আছে। কোভিড মেডিসিনের কোনো বেড খালি নেই। ক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী নিয়ে আছি আমরা।”
আগের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগী এখন চিকিৎসার জন্য আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বয়স্করা হয়ত বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিল। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় তারাও ক্রিটিক্যাল রোগী হিসেবে আসছেন।
“এভাবে যদি চলতে থাকে, আমরা যদি লাগাম টেনে ধরতে না পারি, এটা কিন্তু দুই-তিন সপ্তাহ পরে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মানুষের দুর্দশাও বাড়বে। একটা কঠিন সময় আসছে আমাদের জন্য।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নাজমুল হক বলেন, দৈনিক ৫ হাজার রোগী শনাক্ত হলে তার মধ্যে ১ শতাংশ রোগীর অবস্থা গুরুতর হবে, তাদের জন্য আইসিইউ বা এইচডিইউ সুবিধা লাগবে- এটা আন্তর্জাতিকভাবে ধরে নেওয়া হয়।
“আজ যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, ১০দিন পর তাদের মধ্য থেকে ক্রিটিক্যাল রোগী আসতে থাকবে। তখন আমরা কোথায় জায়গা দেব? এই অবস্থা আমরাও এক মাস আগেও জানতাম না।”
পরিচালক বলেন, “আমরা ঢাকা মেডিকেলের ফ্লোরে আনাচে-কানাচে রোগী রাখতে পারি, এমন একটা বিষয় মনে করে সবাই। কিন্তু আসলে কোভিডে সেটা সম্ভব না, কেননা কোভিডে অক্সিজেন লাগে। সবার অক্সিজেন লাইন লাগে। যে কয়টা অক্সিজেন লাইন আছে, সবগুলোতেই আমরা রোগীদের সেবা দিচ্ছি। কোনটাই কিন্তু খালি নেই।”
সে কারণে অনেক রোগী এলেও তাদের চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক অক্সিজেন সাপোর্ট সেন্টার করা হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় আমাদের লোক আছে। কাউকেই তো আমরা বাদ দিতে পারছি না। ৭০০ অক্সিজেন সাপোর্টের ব্যবস্থা আছে আমাদের এখানে।
“কিন্তু এখন এত রোগী আসছে, এত রোগীর ব্যবস্থাপনা করাও সহজ না। ডাক্তার, নার্সরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করছে, লোড বেড়ে গেছে অনেক। কিন্তু অক্সিজেনের কারণে রোগী ফেরত যাচ্ছে।”
হাসপাতালের চাপ কমাতে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৯২ এর নিচে নেমে গেলে তখন কোভিড রোগীদের হাসপাতালে আনার কথা বললেন পরিচালক।
পরিস্থিতি যে দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমানও সে কথা বললেন।
“রোগীর খুবই চাপ, আমরা ঠাঁই দিতে পারছি না এমন একটা অবস্থা। বেডগুলো আজকে মোটামুটি পূর্ণ। দুই-একদিনের মধ্যে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালু হবে আমাদের এখানে। এখন সাধারণ বেড আছে ১৫০টা। আরও ৫০টা বেড আমরা শনিবারের মধ্যে চালু করব।”
নতুন রোগীদের অধিকাংশেরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “অক্সিজেনের রোগী ছাড়া আমরা ভর্তি নিচ্ছি না।”
কোভিড রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নন-কোভিড রোগের চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে কোভিডের চিকিৎসা চালানো হবে বলে জানালেন খলিলুর রহমান।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করি। অবস্থা ভালো হলে আবার ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। খালি থাকলে বাইরে থেকে রোগী ভর্তি করা হয়।
“তবে এখন প্রতিদিনই আইসিইউ বেডের জন্য রিকোয়েস্ট আসছে। আর সাধারণ ওয়ার্ডের কথা যদি বলি, ওয়ার্ডগুলোতে কিছু শয্যা খালি আছে, তবে রোগী ভর্তির পরিমাণ আগের থেকে চারগুণ বেড়েছে।”
রোগীর চাপ বেড়েছে বেসরকারি হাসপাতালেও। এভারকেয়ার হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক ডা. আরিফ মাহমুদ জানালেন, কয়েক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের কোভিড ইউনিট প্রায় ফাঁকা ছিল। ১৯ মার্চের পর থেকে রোগীর চাপ আবার বেড়ে গেছে।
“২৮টা কেবিন, ১২টা আইসিইউর একটাও ফাঁকা নেই। অনেক রোগীর স্বজনরা সিটের জন্য অনুরোধ করলেও ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না। এক সময় আমরা চিন্তা করছিলাম বেড কমিয়ে ফেলব কি না। কিন্তু অনেক রোগীকে ফেরত দিতে হচ্ছে, অনেকেই সরাসরি চলে আসছেন, তারা ফেরত যাচ্ছে।”
টিকা নিয়ে সংকট
বাংলাদেশে আগামী ৮ই এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরুর কথা থাকলেও নতুন করে টিকা পাওয়া নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এমনকি প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকাও এ মূহুর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই।
জানুয়ারি থেকে গত তিন মাসে বাংলাদেশের কেনা টিকার মধ্যে দেড় কোটি ডোজ আসার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবেই এখন পর্যন্ত সে টিকা থেকে বাংলাদেশে পেয়েছে অর্ধেকেরও কম।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি ইঙ্গিত দেন, সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে যথাসময়ে টিকা না এলে তারা ‘অন্য পরিকল্পনা’ করবেন।
অন্য কোন সূত্র থেকে টিকা আনার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি এখন পর্যন্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে সেরাম ইন্সটিটিউট চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হলে করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন টিকা নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে এবং তারা আশা করছেন চাহিদা মতো টিকা সময়মতই পেয়ে যাবেন তারা।
সূত্র মতে, দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরুর আগে প্রথম ডোজ দেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করা হবে। আবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মধ্যেই নতুন করে টিকা আসা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এরপর আবার নতুন করে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে সংকটের আশঙ্কা নেই।
যদিও আগামী ৮ই এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া শুরুর কথা থাকলেও তার আগে প্রথম ডোজ দেয়া কবে বন্ধ হবে সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আবার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করা হলে, যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তাদেরও অনেকের টিকা না পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।
জনসনের টিকা আমদানি করবে সরকার
ভারত সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর সময়মত টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকার পরের চালান কবে বাংলাদেশ হাতে পাবে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তিনি।
সময়মত টিকা না পেলে চলমান টিকাদান কর্মসূচিতেও এর প্রভাব পড়বে। টিকার এই সংকট কাটাতে আমেরিকান কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন থেকে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের মাধ্যমে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এ টিকা কেনা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধ করার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ইউনাইটেড নেশন্স ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ইমার্জেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) এর মাধ্যমে জনসনের টিকা কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, একদিকে টিকা যথাসময়ে না পাওয়ায় এবং অন্যদিকে পাওয়া টিকা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করতে পারায় সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, তিন মাসে ৫০ লাখ মানুষেরও দুই ডোজ টিকা প্রদান শেষ করা যায়নি, অথচ এখনই টিকার সংস্থান হুমকির মুখে। টিকা নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি হওয়ায়, টিকাদানের মাধ্যমে সংক্রমণ মোকাবেলা করার যে সম্ভাবনা ছিল তা হুমকির মুখে পড়বে।
বেনজির আহমেদ বলেন, সব মিলিয়ে টিকাকে কেন্দ্র করেই এই সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অথচ কীভাবে সংকট মোকাবেলা হবে তার কোন উত্তর কারো কাছে নেই।
জনসচেতনতার অভাব
করোনাভাইরাসের মতো অতিসংক্রামক রোগের সংক্রমণ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সর্বসাধারণ পর্যায়ে ব্যাপক শিথিলতার কারণেই নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
গত বছরের যে সময়ে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছিল, এ বছরও সেই সময়েই তা আবার নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু গত বছর দীর্ঘ সাধারণ ছুটি, নানা মাত্রার লকডাউন এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার যেটুকু প্রয়াস লক্ষ করা গিয়েছিল, দুঃখজনকভাবে এখন তা অনুপস্থিত। এটাই এখনকার সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রয়াস প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত উভয় পক্ষের আন্তরিকতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে অবহেলা বা দায়িত্ববোধের অভাব দেখা দিলে তার নিয়মানুগ প্রতিকারের পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে।
অফিস-আদালত, কলকারখানাসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের (জরুরি সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া) কাজকর্ম অর্ধেক জনবল দিয়ে চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্যও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমত আন্তরিকভাবে তৎপর হতে হবে; তবে এই ক্ষেত্রে সরকারি নজরদারির প্রয়োজন হতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ