কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় চকরিয়া সাব রেজিষ্ট্রি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অভিযানিক দল। এ সময় ঘুষের ৬ লাখ ৪২ হাজার ১০০ টাকাসহ সাব-রেজিস্ট্রারকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। এসময় তার সঙ্গে অফিস মোহরারকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন চকরিয়ার সাব রেজিস্ট্রার মো. নাহিদুজ্জামান (৩১) ও অফিস মোহরার দুর্জয় কান্তি পাল (৩৮)। নাহিদুজ্জামান নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার উত্তর নাড়িবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। দুর্জয় কান্তি পালের বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল এলাকায়। অভিযানের সময় অফিস সহকারী শ্যামল বড়ুয়া পালিয়ে গেছেন।
এর আগে অফিসে থাকা সাব রেজিস্ট্রার, প্রধান সহকারী, মোহরারসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের টেবিলের ড্রয়ারসহ বিভিন্নস্থানে তল্লাশী চালায় দুদকের অভিযানিক দল। কার্যালয়ে অভিযান শেষ করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভিযানিক দলটি সাব রেজিস্ট্রারের ভাড়া বাসায়ও অভিযান চালায়। সাব রেজিস্ট্রারের বাসায় অভিযানের সময় দুদক টিমের সঙ্গে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে চকরিয়া সাব রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযান শুরু করে। প্রায় ১০ ঘণ্টার অভিযানে চকরিয়া সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে ঘুষ ও কমিশন বাবদ আদায় করা ৬ লাখ ৪২ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২–এর সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ৬ লাখ ৪২ হাজার ১০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাব রেজিস্ট্রার নাহিদুজ্জামানের ব্যবহৃত স্টিলের লকার থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫০ টাকা, অফিস মোহরার দুর্জয় কান্তি পালের ড্রয়ার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও শ্যামল বড়ুয়ার ড্রয়ার থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ টাকা জব্দ করা হয়। এসব টাকা বৃহস্পতিবার জমি রেজিস্ট্রির সময় অবৈধ লেনদেন হয়েছে। এসব টাকার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা। অভিযানের সময় কৌশলে পালিয়ে গেছেন অফিস সহকারী শ্যামল বড়ুয়া। অন্য দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ওই তিনটি ড্রয়ার থেকে ঘুষ লেনদেনের হাতের লেখা ৪১টি স্লিপ জব্দ করা হয়েছে।
ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে এ অভিযানে পরিচালনা করা হয়েছে বলে দুদকের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে সোপর্দ করার জন্য ভোরে চকরিয়া থানায় নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার তাদের আদালতে তোলা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভার কাহারিয়ার ঘোনার মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে রশিদ আহমদ কিছু দিন আগে সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ ও কমিশন আদায়ের অভিযোগ এনে হটলাইন ১০৬ নম্বরে অভিযোগ দেন।
জমি রেজিস্ট্রি করার সময় তার কাছ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা ঘুষ ও কমিশনের টাকা আদায় করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের হটলাইনে (১০৬) চকরিয়া সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের এক ভুক্তভোগী ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে অভিযোগ করেন। এরপর দুদকের একটি গোয়েন্দা দল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছদ্মবেশে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অবস্থান করে। দলটি সরেজমিনে ঘুষ লেনদেনের চিত্র দেখে। পরে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযান শেষ হয় রাত তিনটায়।
অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জানান।
চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের জানান, গ্রেপ্তারদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনৈতিক বা অনিয়মের ঘুষ বা উৎকোচ ব্যবস্থাটা অনেক অফিসেই নিয়ম মেনে চলে। যেমন ভূমি অফিসের চিত্রটা একসময় শুনেছি যে, একেবারে পিয়ন থেকে ঊর্ধ্বতন পদ পর্যন্ত একে অন্যকে ঘুষ দিতেন। কারণ বড় কর্তা খুশি হলে অধীনস্তদের এমনিতেই অনেক স্বার্থ হাসিল হয়ে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশের কনস্টেবল বা কাস্টমসের চাকরি, প্রতিটি খাতে কী পরিমাণ উৎকোচ দিতে হবে তার সবকিছু পূর্বনির্ধারিত।
তারা বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি কমাতে হলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও অসাধু সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে যে অশুভ আঁতাত গড়ে উঠেছে, সেটি ভেঙে দিতে হবে। যেসব দেশের সংবাদমাধ্যম বেশ স্বাধীন সেসব দেশ ঘুষ-দুর্নীতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কেননা, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এ ক্ষেত্রে সরকারের চোখ ও কানের ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি সত্য প্রকাশের বাধাগুলো অপসারণ করা যায়। একই সঙ্গে নাগরিক সমাজকে যুক্ত করতে পারলে সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনা সহজ হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ