করোনা মহামারি সবচেয়ে বেশি আঘাত করে যাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতে। এই অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঢেউ আশঙ্কাজনক। সেই ইউরোপেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ অপ্রত্যাশিত ধীরগতিতে দেয়া হচ্ছে বলে সমালোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর ফলে করোনা মহামারি আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি।
আজ বৃহস্পতিবার(১ এপ্রিল) ডব্লিউএইচও’র ইউরোপ বিষয়ক পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই মহামারি থেকে বের হতে ভ্যাকসিন আমাদের সবচেয়ে বড় উপায়। কিন্তু ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে অপ্রত্যাশিত ধীরগতিতে। এর ফলে মহামারি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে, প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে এবং আমাদের স্টকে থাকা প্রত্যেকটি শিশি ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়া (ভ্যাকসিন প্রয়োগ) অবশ্যই বেগবান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপে ভাইরাসের অবস্থা গত কয়েকমাসের চেয়ে এখন আরও বেশি আশঙ্কাজনক।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাঁচ সপ্তাহ আগে ইউরোপে সাপ্তাহিক নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ১০ লাখের নিচে নেমে এসেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচও’র ইউরোপ অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। নতুন করে ১৬ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ইউরোপে করোনায় মোট মৃত্যু দ্রুত ১০ লাখের দিকে এগোচ্ছে। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চার কোটি পার হতে যাচ্ছে।’
এদিকে করোনাভাইরাসের বিপজ্জনক একটি ধরন ইউরোপের কিছু অঞ্চলে ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে। নতুন এ ধরন মারাত্মক।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি (বি.১.১.৭) প্রথম যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। এটি এই ভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর চেয়ে আরও বেশি সংক্রামক। এটি আরও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং দ্রুত তরুণ জনগোষ্ঠীকে সংক্রমিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি বিশেষজ্ঞ মাইকেল অস্টারহোম গত মঙ্গলবার সিএনএনকে বলেন, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি আরও বেশি মারাত্মক। এটি আরও বেশি প্রাণঘাতী বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
অস্টারহোম বলেন, ‘আমরা যদি আর কিছুদিন সতর্ক থাকি, গ্রীষ্মের আগে যথেষ্টসংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে পারি, তাহলে এই ধরনটি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
বি.১.১.৭ নামের করোনার নতুন ধরনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গত মাসে সতর্ক করে বলেছিল, করোনার নতুন ধরনটি সেখানে দ্রুত ছড়াচ্ছে। দেশটিতে ৫ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছে। গত বছরের এপ্রিলের পর এটাই সেখানে আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামী তিন সপ্তাহ সব স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স।
নতুন করে দেওয়া বিধিনিষেধের আওতায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বুধবার একমাসের লকডাউন ঘোষণা করেছেন।
ম্যাক্রোঁ বলেন, আগামী শনিবার থেকে ফ্রান্সে জরুরি প্রয়োজনীয় দোকানপাট ছাড়া অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসিন্দাদের নিজ নিজ বসতবাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটারের চেয়ে দূরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া দূরশিক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
ফ্রান্সের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘নাজুক’ উল্লেখ করে ম্যাক্রোঁ তার ভাষণে বলেন, আমরা যদি এই মুহূর্তে পদক্ষেপ না নিই, তাহলে পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাব।
এদিকে তুরস্কের কর্মকর্তারা বলেছেন, সেখানে মহামারি শুরুর পর থেকে এখন করোনা শনাক্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে করোনাভাইরাসের নতুন রূপটির কারণে।
কানাডাতেও করোনার নতুন ধরনটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। দেশটিতে এখন তরুণদের মধ্যেও সংক্রমণ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রও একই পথে যেতে পারে। কারণ, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।
ডব্লিউএইচও’র ইউরোপ বিষয়ক আঞ্চলিক জরুরি বিভাগের পরিচালক ডরিট নিটজান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি ও ছড়ানোর হারের সঙ্গে নতুন ধরন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই প্রাথমিক রোগ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের মাধ্যমে সংক্রমণ কমানো অত্যন্ত জরুরি।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৯
আপনার মতামত জানানঃ