নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের মামলার আসামি করা হয়েছে বিএনপির এক মৃত নেতাকে। ওই নেতার নাম আলী হোসেন প্রধান। তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা নাশকতা মামলার খবর প্রকাশ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ কারাগারে মারা যান আলী হোসেন প্রধান। ওই বছর ৩ নভেম্বর একটি রাজনৈতিক মামলার গ্রেফতার হন তিনি। বিএনপির এ নেতা মারা যাওয়ার চার বছর পর সোমবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি নাশকতা মামলার ৭ নম্বর আসামি হয়েছেন তিনি। হেফাজতের ডাকা হরতালে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা দায়ের করেন থানার এস আই (নিরস্ত্র) কাজল চন্দ্র।
গত রোববার (২৮ মার্চ) হেফাজতের ডাকা হরতালে নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা ব়্যাব-পুলিশের ছয় মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে৷ মামলায় বিএনপির সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, তার ছেলে নাসিক কাউন্সিলর গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, আবদুল হাই রাজু, বিলুপ্ত মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু, বিএনপি সমর্থক ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, জামাত নেতা বশিরুল্লাহসহ ১৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে৷ তবে মামলায় বাদ পড়েছেন জেলা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ৷
এদিকে বিএনপি বলছে, হেফাজতের হরতালে তাদের সমর্থন ছিল না৷ সরকার তাদের ঘায়েল করার জন্য এই মামলাগুলোতে আসামি করেছে৷ এদিকে এই মামলায় পাওয়া গেছে মৃত বিএনপি নেতার নাম৷
পুলিশের করা পাঁচ মামলার দু’টি মামলার বাদী হয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু শাহাদাৎ মোহাম্মদ শাহীন ও কাজল চন্দ্র মজুমদার৷ এসআই শাহীনের করা মামলায় ২৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে মৃত বিএনপি নেতা আলী হোসেন প্রধানকে এবং এসআই কাজল ৭ নম্বর আসামি করেছেন আলী হোসেন প্রধানকে৷ দু’টি মামলাতেই আলী হোসেন প্রধানের বাবার নাম মৃত আলমাছ প্রধান ও ঠিকানা সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি মাইজপাড়া এলাকা উল্লেখ রয়েছে৷ তার পরিচয় হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে মামলায়৷ এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৪ জিসেম্বর তিনি কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন৷
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমরা তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছি৷ তাকেও আসামি করার মানে হলো এই মামলা মনগড়া তা প্রমাণিত হওয়া৷ পূর্বের গায়েবি মামলার আসামিদের তালিকা ধরে ধরে এবং সরকারি দলের লোকজনের প্রেসক্রিপশনে পুলিশ এমন মামলা করেছে৷ অন্যথায় ৫ বছর পূর্বে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম আসা সম্ভব না৷’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘মামলার এজাহারের খসড়ায় ভুলক্রমে আলী হোসেন প্রধানের নাম টাইপ করা হয়েছিল৷ রাতেই আমরা ভুল সংশোধন করেছি৷ সংশোধন করে আদালতে মামলার কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে৷’ তবে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আদালতে মামলার যে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে তাতেও মৃত আলী হোসেন প্রধানের নাম রয়েছে৷
এদিকে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হরতাল ডেকেছিল হেফাজতে ইসলাম৷ তাদের ডাকা হরতালে আমাদের সমর্থন ছিল না৷ অথচ মামলায় আমাদের আসামি করা রয়েছে৷ মূসত সরকার বিএনপিকেই ঘায়েল করতে চায়৷ রাজনীতির মাঠ থেকে বিএনপিকে সরাতেই এই মামলাগুলো করা হচ্ছে৷ সারা বাংলাদেশেই এমনটা চলছে৷ নির্বাচনের পূর্বে যেমন গায়েবি মামলা করা হয়েছিল তেমনি এই মামলাগুলোও গায়েবি৷’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৩ সালের সময়েও হেফাজতের আন্দোলনের পর বিএনপির লোকজনকে আসামি করা হয়েছিল৷ হেফাজতকে বাদ দিয়ে মামলা আমাদের দেওয়া হয়৷ প্রকৃত ঘটনা যারা ঘটালো তাদেরকে আড়ালে রাখা হয়৷ কেননা হেফাজতের সাথে আঁতাত করে তারা তাদের সুবিধা দিতে চায়৷ দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় হেফাজত৷ এই মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই৷’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ