সম্ভবত কোনো একটি প্রাণীর মাধ্যমেই করোনাভাইরাস মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শনাক্ত হওয়ার এক বা দুই মাস আগে থেকেই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি খসড়া প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়েছে। ডব্লিউএইচওর একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দলের মতে, ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) ডব্লিউএইচওর খসড়া প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
বিশ্বজুড়ে মহামারির আকার নেওয়া করোনাভাইরাস ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কোনও প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানান। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করে থাকেন, ভাইরাসটি উহানের একটি বণ্যপ্রাণী বিক্রি হওয়া বাজার থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যাপক বিতর্কের পর ডব্লিউএইচও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি দলকে চীনে তদন্ত চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এই বছর দলটি চীনের উহান শহর ছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বারবার পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচও’র একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য প্রস্তুত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সোমবার ডব্লিউএইচওর সদস্য একটি দেশের জেনেভাভিত্তিক কূটনীতিকের কাছ থেকে প্রতিবেদনের প্রায় চূড়ান্ত সংস্করণটি পেয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি। তবে এই রিপোর্টে পরিবর্তন আনা হবে নাকি এটিই প্রকাশ করা হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ওই কূটনীতিক দাবি করেছেন, এটিই চূড়ান্ত সংস্করণ। দ্বিতীয় আরেক কূটনীতিকও একই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে তারা কেউই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে সম্ভাব্য চারটি পরিস্থিতির ক্রম সাজিয়েছেন তদন্ত করা গবেষকরা। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভাইরাসটি বাদুড় থেকে দ্বিতীয় আরেকটি প্রাণীর মারফত মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়েছে-এমন অনুমান। তারা বলছেন বাদুড় থেকে সরাসরি মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটা সম্ভব। তবে কোল্ড চেইন খাদ্য পণ্যের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তারের সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়নি।
বাদুড় করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে পরিচিত। আর কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়গোত্রীয় একটি ভাইরাস বাদুড়ের শরীরে পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাদুড় ভাইরাস এবং সার্স-কোভ-২ এর মধ্যে বিবর্তনীয় দূরত্ব রয়েছে; যা কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান বলে ধারণা করা হয়। তবে এর মধ্যে সংযোগকারীর অনুপস্থিতি দৃশ্যমান।
চীন থেকে ১৭ জন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আরও ১৭ জন বিশেষজ্ঞ এবং ডব্লিউএইচওসহ আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এ প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব জেন পিসাকি জানিয়েছেন, বর্তমানে তাদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করছেন এবং এ কাজটি তারা দ্রুত শেষ করতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যালোচনাটি শেষ করার অপেক্ষায় আছি। কোভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে একটি নিরপেক্ষ ও কারিগরি দিক দিয়ে নির্ভুল গবেষণা প্রতিবেদনের দিকে লক্ষ্য রাখছিলাম আমরা। আশা করছি যে এখান থেকেই আমরা আমাদের পরবর্তী দিকনির্দেশনাগুলোর ব্যাপারে জানতে পারব।’
এদিকে আজও করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত ৫ হাজারের ওপর। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে সংক্রমিত আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে । একই সময় করোনায় সংক্রমিত ৫ হাজার ৪২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবারও দেশে করোনায় সংক্রমিত হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর করোনায় সংক্রমিত ৫ হাজার ১৮১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল গতকাল।
এর আগে গত বছরের ২ জুলাই করোনায় সংক্রমিত ৪ হাজার ১৯ জন রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গিয়েছিল। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৯৯৪ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৮০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ হাজার ৬২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চূড়ায় (পিক) উঠেছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাসে। ওই সময়ে, বিশেষ করে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার রোগী শনাক্ত হতো। বেশ কিছুদিন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর এক মাসের বেশি সময় ধরে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ছয় দিন ধরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী (প্রতিদিন) শনাক্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরেকটি চূড়ার (পিক) দিকে যাচ্ছে দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ