খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ চালিয়েছে। সমাবেশের আগেই ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় নেতা কর্মীদের। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজ সোমবার(২৯ মার্চ) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়ার সময় পুলিশ নেতা কর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধ শতাধিক নেতা কর্মী আহত হন।
বিএনপি নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে তারা নগরীর কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করেন। এরপরই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে তাদের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের কয়েকটি স্থানে শান্তিপুর্ণ মিছিলে পুলিশ এবং সরকারি দলের তান্ডব ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার বেলা সকাল সোয়া ১১টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দলীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল ১১ টার দিকে নেতা কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এসময় নেতা কর্মীরা বড়বাজার, ডাকবাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো সরে যান।
ঘটনার পরপরই বিএনপি সোমবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করেছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু পুলিশের এই হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
প্রেসব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেছেন, বিনা উস্কানীতে পুলিশ অতর্কিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী রক্তাক্ত জখম হয়েছে। শান্তির শহর খুলনাতে গণতন্ত্রকামী নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর বিনা উস্কানীতে অতর্কিত লাঠিচার্জ গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়।
তিনি বলেন, সরকার যে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে এবং পুলিশই সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে, তা আরো একবার প্রমাণ হলো।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জনতার আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার হবে। আর এক মুহুর্ত এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
প্রেসব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জেলা সভাপতি এ্যাড. শফিকুল আলম মনা, নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খানসহ নগর ও জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে শুক্রবার (২৬ মার্চ) সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ জন হেফাজতকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ সোমবার (২৯ মার্চ) পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার (২৬ মার্চ) সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি শুক্রবার রাতে করা হয় বলেও জানান ওসি আবু বকর সিদ্দিক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের কর্মীদের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ৭০ জন। সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ১০ জন সাংবাদিকও আহত হন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুই দিনের সফরে শুক্রবার ঢাকায় এসেছিলেন। তার এই আগমনের বিরোধিতা করে আসছিল বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পরপর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ গেটের সিঁড়িতে মোদিবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে মুসল্লিদের একটা অংশ। সেখানে মসজিদ ফটকের আশপাশে অবস্থান ছিল সরকারি দলের নেতাকর্মীদেরও। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। একপর্যায়ে মোদিবিরোধীরা মসজিদের ভেতরে এবং অপর পক্ষ মসজিদের বাইরে অবস্থান নেন। মসজিদের ভেতরে অবস্থানকারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। তাদের লক্ষ্য করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।
ঢাকায় মোদিবিরোধী বিক্ষোভে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে গুলিতে চারজন নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওই দিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেন। রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। সেখানে সংঘর্ষে একজন নিহত হন।
শুক্রবার হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুলিতে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে হেফাজতে ইসলাম। এই হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এ নিয়ে তিন দিনের সহিংস বিক্ষোভে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার ইতিমধ্যেই বিরোধী দলগুলোকে রাজনীতির মাঠ থেকে উদাও করে দিয়েছেন। দেশে আদতে বিরোধী দল বলতে তেমন কোনো দল নেই। যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য বড় এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বিরোধী দলের ভূমিকায় ঝুলে থাকা দলটি বিএনপিকেও কোথাও সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। বিএনপির লোকজন একত্র হলেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস পুলিশ দ্বারা বেধম মারধর কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশের গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরা থাকা আওয়ামী সরকার যেন বিএনপির কোনো জটলাকেই সহ্য করতে পারছে না।
তারা বলেন, কয়েকদিন ধরে হেফাজত ইসলামের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ করেও যেন সরকার ক্ষ্যান্ত হননি। সংঘর্ষে কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারালেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ভাবান্তর নেই। এখন হেফাজতের নেতাকর্মীদের হয়রানি করার নিমিত্তে মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ আন্দোলন বিক্ষোভ মিছিলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক হামলায় বিক্ষোভকারী খুন হওয়ার কারণে সরকারের বিরুদ্ধেই মামলা হওয়া উচিত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ