ভারত সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর সময়মত টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকার পরের চালান কবে বাংলাদেশ হাতে পাবে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তিনি। সময়মত টিকা না পেলে চলমান টিকাদান কর্মসূচিতেও এর প্রভাব পড়বে।
রোববার (২৮ মার্চ) গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমরা নতুন করে কোনো শিডিউল পাইনি। আমরা জিজ্ঞেস করেছি বেক্সিমকোর মাধ্যমে। তারা জানিয়েছেন, (পরের চালানের বিষয়ে) তারা এখনও কোনো খবর পাননি। তারা সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা এখনও শিডিউল পায়নি। এটা হলো লেটেস্ট খবর।
কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ দেশে এসে পৌঁছেছে। নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এর বাইরেও ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারত। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় এরই মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫২ লাখের বেশি মানুষ। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে টিকা সরবরাহ করতে পারেনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। এ দুই মাসে ৮০ লাখ ডোজ টিকা কম সরবরাহ হয়েছে। এতে দেশে চলমান টিকা কার্যক্রমে প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে টিকা সরবরাহে বৈশ্বিক সংকটের কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে গণটিকা কর্মসূচি শুরু করে সরকার। গতকাল পর্যন্ত মোট ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৮ জন নারী ও পুরুষ এ টিকা নিয়েছেন। গতকাল রোববার ৫৮ হাজারের কিছু বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু করার কথা রয়েছে। এ সময় পর্যন্ত ৬০ লাখ মানুষ টিকা নিলে তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেবে। বাংলাদেশের হাতে টিকা রয়েছে ৪৯ লাখের কিছু বেশি।
গত নভেম্বরে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ‘কোভিশিল্ড’ টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে সরকার। টিকার দাম পরিশোধ করা হয় অগ্রিম। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসার কথা। গত জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ টিকা এলেও ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২০ লাখ ডোজ। চলতি মাসে কেনা টিকার চালান এসে পৌঁছেনি। তবে দুই দফায় বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এ পর্যন্ত ৭৬টি দেশে মোট ৬ কোটি ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডোজ পেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন কোভ্যাক্স। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চের পর বাণিজ্যিক কোনো চালান বিদেশে যায়নি।
করোনার টিকা বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের টিকার ঘাটতি হবে না, যা আছে তা শেষ করতে আরো সময় লাগবে। এর মধ্যে নতুন করে তিন কোটি টিকা কেনার জন্য কার্যক্রম চলছে। কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়া গেলে কোনো সমস্যা হবে না।’
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৫টি কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৪০০টি দল টিকা প্রয়োগের কাজ করছে। প্রতিটি দলে দুজন টিকা প্রয়োগকারী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। প্রতিটি দল দৈনিক ১৫০ জনের শরীরে টিকা প্রয়োগে সক্ষম বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসেবে দৈনিক সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষের শরীরে টিকা প্রয়োগের সক্ষমতা রয়েছে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়।
এদিকে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১২ কোটি ৭৭ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬২ হাজার ১৪৭। এর মধ্যে ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ১০ কোটি ২৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৬ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরইমধ্যে করোনার একাধিক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ৯ লাখ ৬২ হাজার ৮০৩। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৫২৬ জনের।
আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৮। এর মধ্যে তিন লাখ ১২ হাজার ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ৩৯ হাজার ২১০। এর মধ্যে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৪। এর মধ্যে আট হাজার ৯০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ১৬৭। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৪৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ