ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণের প্রথম দফায় শনিবার রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের ৫ টি জেলার মোট তিরিশটি আসনে ভোট নেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, বিকাল ৫ টার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে শনিবার। এই হিসাব বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তারপরও ভোট হয়েছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত শতকরা ভোটের চূড়ান্ত হিসাব কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের ৩০টি কেন্দ্রে হওয়া ভোট নিয়ে কমিশন খুশি।
ইভিএমে আপত্তি
শনিবার সকাল থেকে ইভিএম নিয়ে অভিযোগ আসতে শুরু করে। দক্ষিণ কাঁথির মাজনায় ‘ইভিএম’-এ কারচুপির অভিযোগ ওঠে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মাজনার বুথে ইভিএম যন্ত্রে তৃণমূলে ভোট দিলেও দেখা যাচ্ছে ভোট পড়ছে বিজেপিতে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সে কারণে কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
নির্বাচনী সহিংসতা
পশ্চিমবঙ্গে শনিবার প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই সহিংসতা হয়েছে। এ দিন সকালেই কোশিয়ারিতে একজন বিজেপি কর্মীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বেশ কিছু জায়গায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ। জঙ্গলমহল থেকে পরিবর্তন শুরু হবে। প্রথম দফার ৩০টি আসন বিজেপি পাচ্ছে’— বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
এরকম নানান ঘটনা নিয়ে ভারতের এই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের কাছে মোট ৬২৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী কর্মকর্তা (সিইও) আরিজ আফতাব বলেছেন, ‘বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া প্রথম দফার ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’
এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত ঘোষের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। সুশান্তের দাবি, ‘তৃণমূল এবং বিজেপি যোগসাজশ করেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে সৌমেন্দু অধিকারীর গাড়িতেও হামলার অভিযোগ ওঠে এদিন। সিইও দফতর জানিয়েছে, ওই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ১০ জনকে।
তৃণমূলের অভিযোগ
তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রচুর অনিয়মের অভিযোগ জানিয়েছে। যার মধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে বুথ দখল, তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দিলে সেটা বিজেপির দিকে চলে যাওয়ার মতো অভিযোগও আছে।
সকাল থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস একের পর এক অভিযোগ করতে থাকে যে কোথাও বিজেপি কর্মীরা তাদের বুথ এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে, কোথাও ইভিএম যন্ত্রে তৃণমূলকে ভোট দিলে তা বিজেপিতে চলে যাচ্ছে, আবার কোথাও সাধারণ মানুষ যাতে ভোট না দিতে পারেন তার জন্য বুথ জ্যাম করেছে বিজেপি কর্মীরা। এরকম অজস্র অভিযোগ জানাতে থাকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস দল।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী কোনও কোনও জায়গায় বিজেপিকে সহায়তা করছে এমন অভিযোগও করেছে তৃণমূল।
বিজেপির সন্তোষ
এদিকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি বলছে, গত চার দশকের মধ্যে এদিনই সব থেকে শান্তিতে ভোট হয়েছে – ভোট জালিয়াতিও সব থেকে কম হয়েছে এদিনই।
রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পেরেছেন। বাকি ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেও যাতে পরের দফা থেকে অশান্তি না হয়, তাই আমরা কমিশনকে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করার অনুরোধ করেছি।’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ভোট দিতে না পেরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দোষারোপ করছে তৃণমূল। খেজুরি, পুরুলিয়ায় ভোটারদের ভয় দেখানো হয়েছে। বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ। জঙ্গলমহল থেকে পরিবর্তন শুরু হবে। প্রথম দফার ৩০টি আসন বিজেপি পাচ্ছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৪০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ