ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেতাকর্মী হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশে যুবদল-ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল করছে। পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় করা এসব বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। এদিকে নেতাকর্মীদের হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সমাবেশে হেফাজত নেতারা হুশিয়ার দিয়ে বলেন, আগামীকাল রোববার ডাকা হরতালে বাধা দিলে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদলের বিক্ষোভ মিছিল
ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি মিছিল রাজধানীর মালিবাগ থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, এ অবৈধ সরকারের আয়ু শেষ হয়ে গেছে। যে কোনো সময়ে এ সরকারের পতন ঘটবে। তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর মতো এ দেশের ছাত্র জনতার বুকের রক্ত ঝরিয়েছে। তারা গোলামির জন্য, বিদেশি প্রভুকে খুশি রাখার জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
সমাবেশে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনসহ কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এখানে ২/৩টি গাড়ি ভাংচুর করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ছাত্রদলের আরেকটা মিছিল রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে এলিফ্যান্ট রোড পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোক্তাদির হোসেন তরু, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত রাব্বি আরাফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আকতার হোসেন এবং সদস্য সচিব আমান উল্লাহসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এসময়ে নেতাকর্মীরা এলিফ্যান্ট রোডে প্রায় ৮টি গাড়ি ভাংচুর করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায় বিএনপির তিন সংগঠনের যৌথ ব্যানারে আয়োজিত আরেকটি মিছিল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহুমদ জুয়েল, আদনান, আরিফ এমদাদ, বেলাল হোসেন খান, কবি নজরুল করেজের সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তিন সংগঠনের আরেকটি মিছিল মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে তিতুমীর কলেজ প্রদক্ষিণ করে আবার মহাখালীতে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এসময়ে লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফকরুল ইসলাম রবিন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ। এতে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগ দ্বারা সাধারণ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে এবং সশস্ত্র ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের জেলা ও মহানগরীতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ও ছাত্রদল যৌথভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করবে বলে কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল।
যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবকদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল গত শুক্রবার এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দেশের সকল জেলা ও মহানগর ইউনিটসমূহকে সর্বাত্মকভাবে কর্মসূচী পালনের আহবান জানিয়েছেন। গতকাল ২৬ মার্চ যুবদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল
এদিকে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দেন। তারা মসজিদের উত্তর গেটের সিঁড়িতে অবস্থান নেন।
সমাবেশে হেফাজত নেতারা হুশিয়ার দিয়ে বলেন, আগামীকাল রোববার ডাকা হরতালে বাধা দিলে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটলে সরকারকে এর দায় নিতে হবে বলে হুমকি দেন তারা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মাদ্রাসাশিক্ষার্থী, ধর্মভিত্তিক দলের নেতাকর্মী ও মুসল্লিদের একটি অংশের সঙ্গে পুলিশ, সরকারি দলের ছাত্র-যুব-স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
এতে হাটহাজারীতে চারজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত হন। আহত হন দেড় শতাধিক।
হতাহতের প্রতিবাদে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ এবং রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়।
বিক্ষোভে উপস্থিত রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হকসহ সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা। এর আগে সকাল থেকে বায়তুল মোকাররম এলাকায় জড়ো হতে থাকেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ‘শহীদ’দের রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। হরতালে বাধা দিলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।
ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেন, মসজিদে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। হেলমেট বাহিনী মহড়া দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। রাজপথে নেমে এলে হেলমেট বাহিনী পালানোর পথ পাবে না। হেলমেট বাহিনীকে আশ্রয় দিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আগামীকাল মাঠে থাকব। গাড়ির চাকা ঘুরবে না। অফিস–আদালত বন্ধ থাকবে।’
বিক্ষোভ কর্মসূচির সভাপতি হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ হরতালে বাধা দিলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে নাশকতা ঠেকাতে সকাল থেকে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং জিরো পয়েন্টসহ আশেপাশের সকল এলাকায় র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন র্যাব, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় বাসে বাসে রিজার্ভ পুলিশ সদস্যদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
উত্তরায় হেফাজতের বিক্ষোভ
নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শনিবার (২৭ মার্চ) সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসংলগ্ন মালেকা বানু স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের উত্তরা জোনের আমির মাওলানা নাজমুল হাসান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতের ঢাকা মহানগরের আমির জোনায়েদ আল হাবিব।
অন্যদের মধ্যে মুফতি কামাল উদ্দিন, মুফতি কেফায়েত উল্লাহ, বিলাল ইবনে মুসলিম, মুফতি ওয়াহেদুল আলম, মাওলানা আনিসুর রহমান, মাওলানা আতিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের বিক্ষোভ
এদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভে হামলা ও হতাহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজত নেতারা।
আজ শনিবার দুপুরে শহরের ডিআইটি রেলওয়ে জামে মসজিদের সামনে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
বিক্ষোভ শেষে মিছিল করার কথা থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মসজিদের সামনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশস্থল চারদিক থেকে ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের আমীর ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আবদুল আউয়াল বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি পুলিশ বাহিনী ও ছাত্রলীগের লোকজনদের বিচার না করেন, তাহলে একদিন এর বিচার হবেই। তাদের রক্তের বদলা নেওয়া হবে। পুলিশদের বলবো, অস্ত্র হাতে আমাদের গুলি করবেন না। অস্ত্র ছাড়া আসেন, দেখেন মুসলমানদের কত শক্তি। আপনারা পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোববার আমাদের হরতাল। শান্তিপূর্ণভাবেই হরতাল পালন করা হবে। আমরা আমাদের দ্বীন কায়েমের জন্য প্রয়োজনে রক্ত দিব।’
পরবর্তীতে নেতারা মাইকে ঘোষণা দেন, রোববার হরতাল সমর্থন করে যেন স্বেচ্ছায় দোকান ও যানবাহন বন্ধ রাখেন সবাই। হরতাল কর্মসূচি পালনে সমবেত হতে নেতাকর্মীদের ফজরের নামাজ ডিআইটি মসজিদে আদায় করার জন্য আহবান জানানো হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ