সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গেলে মাথা ও পিঠে গুলি করার ঘোষণা দিয়ে একদিনেই আরও ৫০ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে মারল মিয়ানমার জান্তা সরকার।
শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভি নিউজ চ্যানেলে প্রচারিত এক ঘোষণায় বলা হয়, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গেলে মাথা ও পিঠে গুলি করা হতে পারে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, আগের জঘন্য মৃত্যুগুলোর ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। বিক্ষোভে গেলে আপনি মাথা ও পিঠে গুলি লাগার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী দিবস ঘিরে জান্তাবিরোধী যেকোনও বিক্ষোভ মোকাবিলায় বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার।
সামরিক অভ্যুত্থান ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আইনপ্রণেতার নিয়ে তৈরি করা জান্তা বিরোধী গ্রুপ সিআরপিএইচের মুখপাত্র ড. সাসা বলেছেন, আজ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য লজ্জার একটি দিন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ৩০০ শতাধিক নিরপরাধ বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করছে।
দিবসটি সামনে রেখে আগেই বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীরা। আজ শনিবার বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়াসহ বিভিন্ন শহরে আটকদের মুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তবে সেই আন্দোলনে গেলে মাথা ও পিঠে গুলি করা হতে পারে বলে শুক্রবার রাতে হুঁশিয়ারি দেয় জান্তা সরকার।
এরপরও পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুসারে শনিবার রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। এদিন ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ দেশটির বিভিন্ন শহরে শোনা গেছে জান্তাবিরোধী স্লোগান।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউয়ের খবর অনুসারে, সকালে ইয়াঙ্গুনের দালা শহরতলীতে একটি পুলিশ স্টেশনের বাইরে বিক্ষোভরত জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে অন্তত চারজন নিহত এবং ১০ জন আহত হন।
রয়টার্স বলছে, ইনসেন জেলায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। এর মধ্যে একজন স্থানীয় অনুর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন।
মিয়ানমার নাউয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, শনিবার সারাদেশে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। তবে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, চারজন প্রাণ হারিয়েছেন পূর্বাঞ্চলীয় লাশিও শহরে, বাগো অঞ্চলে মারা গেছেন আরও চারজন। এছাড়া, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় হপিন শহরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আরও একজনকে।
স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
এমন এক সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যখন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং জনগণ ও গণতন্ত্রের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আজ সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশটির জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, তারা ‘গণতন্ত্রের জন্য’ লড়াই চালিয়ে যাবেন।
শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সুরক্ষায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী পুরো জাতির সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করতে চায়। যে দাবিতে নৃশংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে, যার ফলে দেশের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিনষ্ট হচ্ছে সেটা সঠিক দাবি নয়।
তবে কবে নাগাদ তিনি এই নির্বাচনের আয়োজন করবেন; তা নিশ্চিত করে বলেননি।
কোনও সময়সীমা না জানিয়ে নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে এ সেনাশাসক বলেন, দাবি জানাতে গিয়ে সহিংসতা করা স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এধরনের কর্মকাণ্ড একেবারেই অনুচিত।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির বেআইনী কার্যকলাপের কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছেই। বিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী দেশের পুরো ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ৩৭০ এর অধিক।
এদিকে জান্তাবাহিনী দেশজুড়ে চলমান বিশৃঙ্খলার জন্য বিক্ষোভকারীদের দায়ী করছে। বলছে, অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীরাই দেশজুড়ে বিশৃঙ্খখার সৃষ্টি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৬২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ