ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভরত মাদ্রাসাছাত্ররা রেলস্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন ছাত্ররা। তারা জেলা সদরের জাদুঘর এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন।
এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ ও বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা মাসুক হৃদয়। মাসুক হৃদয় বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা আমার ওপর হামলা করেছে। তারা আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ধারণকৃত ছবি মুছে ফেলেছে। তারা ২০-২৫ মিনিট আমার মোবাইল রেখে সব ছবি ডিলিট করে মোবাইল ফেরত দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আট নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মীর মোহাম্মদ শাহিনসহ আরও কয়েকজন মিলে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা ও শহরের বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা পৌর শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, স্কয়ারসংলগ্ন আব্দুল কুদ্দুস মাখন মুক্তমঞ্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মার্কেট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকায় টানানো ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ছিঁড়ে অগ্নিসংযোগ করেন। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুরও চালানো হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। এ সময় থানাসংলগ্ন দুটি সেতুতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্ররা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. শোয়েব আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, বিকেল ৪টার দিকে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারসহ সাতটি কক্ষে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন মাদ্রাসাছাত্ররা। তিনি জানান, তারা রেললাইনের পাশে স্তূপ করে রাখা কাঠের স্লিপার লাইনের ওপরে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসাছাত্রদের তাণ্ডবের সময় মো. আশিক (২০) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তবে কীভাবে বা কার হামলায় আহত হয়ে ওই তরুণ মারা গেছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। নিহত আশিক জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকার সাগর মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জেলা শহরের কাউতলী এলাকায় আশিক নামের ওই তরুণকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে মাদ্রাসাছাত্ররা সন্ধ্যার সাড়ে ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আরিফুজ্জামান তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পরনে একটি জিনসের প্যান্ট ও লাল রঙের গেঞ্জি ছিল।
বিক্ষোভকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ও পুরাতন কাচারি এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত মিছিলে পুলিশের বাধা ও সংঘর্ষে চারজন হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ দিন দুপুর আড়াইটার দিকে হাটহাজারীতে এ সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন রবিউল, মেহরাজ, আব্দুল্লাহ ও জামিল। নিহতদের তিনজন মাদরাসার শিক্ষার্থী ও অপরজন দর্জি দোকানি বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি আরো জানান, নিহত চারজনই হেফাজত কর্মী।
চারজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হাটহাজারী থেকে আহত অবস্থায় ৯ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। নিহতদের মধ্যে তিনজন মাদরাসার ছাত্র ও একজন দোকানের কর্মচারী।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে হামলার খবরে জুমার নামাজের পর হাটহাজারী বড় মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এতে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এতে অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ অনেকেই আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ৯ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এশিয়ার আরো ৬-৭টি দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিরা আসছেন, তাদের নিয়ে দেশের মানুষের কোনও মাথাব্যথা নেই। কোন প্রতিবাদ মিটিং মিছিল নেই। পুলিশের সামনে বুক উঁচিয়ে দাঁড়ানো নেই। মোদির প্রতি এই বিদ্বেষ কেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই সফরের সাথে দেশের মানুষের সম্পৃক্ততা কোথায়? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সাধারণ মানুষের অংশঅগ্রহণ কোথায়?
মোদির প্রতি এই বিদ্বেষ প্রসঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন বলেন, ‘মোদির মতো একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, যার হাতে লেগে আছে মুসলমানদের রক্ত, তাকে আমরা ওয়েলকাম জানাতে পারি না। মোদিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা মানে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনায় আঘাত হানা, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা। মোদির মতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজকে এনে আমাদের সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা তাকে মেনে নিতাম, যদি তিনি যদি সীমান্ত হত্যা করার জন্য এ দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতেন, তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করতেন, এ দেশের রাজনীতিতে তিনি যদি নাক না গলাতেন।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২২০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ