কদিন আগেও উত্তর কোরিয়া স্বল্প পাল্লার দুটি নন-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এবার জাপান সাগরে আজ বৃহস্পতিবার অন্তত দুইটি দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলমান বিবাদ ও নয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিজেদের শক্তির বার্তা দেওয়ার জন্যই উত্তর কোরিয়ার এই পরীক্ষা। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আজ বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই উত্তর কোরিয়ার প্রথম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পক্ষ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক কর্মকাণ্ড তদারককারী ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ং-এর অবৈধ অস্ত্র কর্মসূচি যে তার প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি, এই পরীক্ষার মাধ্যমে সে বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে।
এই পরীক্ষাকে পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক ডেকেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
তবে, টোকিও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে ছোড়া এই ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের বিশেষ নিরাপত্তা অঞ্চলের বাইরে সাগরে পড়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার পরে ছোড়া হয়েছে।
আরও জানানো হয়, ক্ষেপণাস্ত্র দুটি ৪২০ কিলোমিটার ও ৪৩৯ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সাগরে পড়েছে। তবে, কোনো ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
উত্তর কোরিয়ার ছোড়া এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আর্টিলারি কিংবা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণ হ্যামগিয়ং প্রদেশ থেকে জাপান সাগরে দুটি ‘অজানা প্রক্ষেপণ’ চালানো হয়েছে। কোরিয়ায় এই সাগর পূর্ব সাগর নামে পরিচিত। এই ডিভাইস সম্পর্কে তাৎক্ষনিকভাবে আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে হুমকিস্বরূপ অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কয়েকদিন আগেই পীতসাগরে দুটি নন-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। গত মঙ্গলবার(২৩ মার্চ) এ সম্পর্কে বাইডেন বলেন, এই পরীক্ষাকে যুক্তরাষ্ট্র উসকানি হিসেবে দেখছে না। ওই স্বল্প দৈর্ঘের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আর্টিলারি বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার জন্য নিষিদ্ধ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বলছে, সেনাবাহিনীর নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মের বাইরে যায়নি বলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের কয়েকবার বৈঠক হয়। তবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এরপর উত্তর কোরিয়া আমেরিকার সদিচ্ছার অভাবের কথা জানিয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী যৌথ মহড়া চালায়। এছাড়া টোকিও ও সিউলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সফর করেন।
মহড়া শুরুর পরপরই সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার বোন ও উপদেষ্টা কিম ইয়ো জং আমেরিকার নয়া প্রশাসনের ঘুম হারাম করে দেওয়ার হুমকি দেন।
তিনি মার্কিন নয়া প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আগামী চার বছর ভালোভাবে ঘুমাতে চাইলে শুরুতেই এমন কাজ না করাই ভালো, যা ঘুম নষ্ট করে দিতে পারে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কিম ইয়ো জং বলেন, আমেরিকার নতুন প্রশাসন সমুদ্রের ওপার থেকে আমাদের জমিতে বন্দুকের গন্ধ ছড়াতে লড়াই করে চলেছে। যদি চার বছর শান্তিতে ঘুমাতে চায়, তবে এমন দুর্গন্ধ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকতে হবে তাদের।
এসময় তিনি মার্কিন-সাউথ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া প্রস্তুতির তীব্র সমালোচনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক গত সপ্তাহে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন, কিন্তু উত্তর কোরিয়া তাতে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। এরইমধ্যে স্বল্পপাল্লার দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার দুইদিন পরেই দূরপাল্লার দুটি নন-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া সম্বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জানান দেওয়ার জন্যই উত্তর কোরিয়ার পর পর এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। যুক্তরাষ্ট্র ও এর ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়ার এই দাপট। তবে জো বাইডেন এসব ঠাণ্ডা মাথায়ই হিসাব কষছেন বলে জানান বিশ্লেষকরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ