
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা রফতানি ‘সাময়িক’ বন্ধ করেছে ভারত। বুধবার (২৫ মার্চ) রাতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি সাময়িক পদক্ষেপ। এর ফলে টিকার রপ্তানি আগামী এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে। কোভ্যাক্সের আওতায় যে ১৮০টি দেশ টিকা পাওয়ার কথা, তাদের ক্ষেত্রে ভারতের এ সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলবে।
টিকার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির নেতৃত্বে কোভ্যাক্স নামের এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে। রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এ পর্যন্ত ৭৬টি দেশে মোট ৬ কোটি ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডোজ পেয়েছে কোভ্যাক্স। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে কোনো টিকার চালান বিদেশে পাঠানো হয়নি।
কোভ্যাক্সের টিকা ক্রয় ও বিতরণে যুক্ত থাকা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তরে এক ইমেইলে জানিয়েছে, মার্চ ও এপ্রিলে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য যে টিকার চালান সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে পাঠানোর কথা ছিল, তার রপ্তানির অনুমোদন না মেলায় সরবরাহ বিলম্বিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।“যত দ্রুত সম্ভব টিকার সরবরাহ যাতে পাওয়া যায়, সেজন্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে কোভ্যাক্স,” বলেছে ইউনিসেফ।
বিবিসি লিখেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় ভারত সরকার টিকা রপ্তানি আপাতত স্থগিত রাখার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। বুধবার দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ দিন ৪৭ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২৭৫ জনের। টিকাদান কর্মসূচির সম্প্রসারণে ভারত ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদেরও টিকার আওতায় আনছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই টিকার চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, “এটা সাময়িক পদক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”কর্মকর্তারা বলেছেন, এপ্রিল পর্যন্ত টিকা সরবরাহ সীমিত থাকতে পারে, তবে মে নাগাদ আরও অন্তত একটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেতে পারে; তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। তবে এ বিষয়ে ভারত সরকারের বা সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি এখনও আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশেও সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা সরবরাহ বিলম্বিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সম্প্রতি ইউরোপের কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ ওঠার পর আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দেয়। ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানিসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে। পরে ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) জানায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর। এরপরই বেশ কয়েকটি দেশ ওই টিকাদান আবারও শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মানুষের শরীরে কোভিড–১৯ প্রতিরোধে ৮০ শতাংশ কার্যকর বলে নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা করোনা ভাইরাসের টিকা যুক্তরাষ্ট্রে এডভান্সড ট্রায়ালে শতকরা ৮০ ভাগ কার্যকর বলে তথ্য মিলেছে। এ কথা জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকায় শূকরের কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কিনা বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে এতে শূকরের কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয়নি বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
এদিকে ভারত অক্সোফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সব ধরনের রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করায় দেশে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রাখতে পারে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম এ কথা বলেন।
এদিকে ভারত অক্সোফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সব ধরনের রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করায় দেশে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রাখতে পারে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম এ কথা বলেন।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘অক্সোফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা আমাদের দেশেও খারাপ প্রভাব ফেলবে। আমরা এখন প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ রেখে ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করতে পারি।’
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। সেরামের কাছ থেকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
দেশে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৯০ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে। গত ২০ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো টিকা এসে পৌঁছায়। সেটা ছিল ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেওয়া ২০ লাখ ডোজ। পরবর্তীতে ২৫ জানুয়ারি আসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা, যা ছিল সেরামের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির আওতায় প্রথম চালান। তারপর দ্বিতীয় চালান হিসেবে এসেছে আরও ২০ লাখ ডোজ।
২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। ওই দিন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ